Mittwoch, 8. Oktober 2008

পিথিবী আমোদময় নয়

একটা শান্তিপূর্ণ বিকালে অধিক আনন্দ লভিবার লাগি বাটি হইতে বাহির হইয়া হাঁটিতে লাগিলাম। দেখিলাম দূরে একখানা বন খাঁড়াইয়া আছে ঝিপঝাপ। তাহার পাশে একটা নীলরঙের নদী। নদীতে একখানা বালক নাহাইবার নুইছে। আরেকখানা বালিকা পাড়ে খাঁড়াইয়া নাহাইবার প্রস্তুতি নিতাছে। তাহার পিছনেই একটা গৃহপালিত কুকুর অযথা ভুকভুক করিতেছে।
এই শান্তিপূর্ণ দৃশ্য দেখিয়া আমার খুউব আমোদ হইল। ফলে আরো আমোদ লভিভার লোভে আমি তাহাদের সন্নিকটে উপস্থিত হইলাম। কিন্তু আমার উপস্থিতি দেখিবা মাত্র বালক নাহান বাদ দিয়া উরে পিতারে বলিয়া ঝাড়িয়া দৌড় কষাইল বন বাঁদাড় ভেদ করিয়া। বশংবদ কুকুরটিও তাহাকে অনুসরণ করিল আরো জোরেশোরে ভুক ভুক করিয়া।
কিঞ্চিত অবাক খাইলাম। বুঝিতে নাড়িলাম না উহা কী হেতু ওইভাবে দাবাড় কষাইলো। ফলে বুঝিবার তরে বালিকার আরো নিকটবর্তী হইলাম। কিছু জিজ্ঞাসিবার আগেই উহা কাঁদো কাঁদো গলায় কহিয়া উঠিল, আমি কিছু করি নাই। হেইতিই আমারে ডাইক্যা নিয়া আইছে।
বুঝিলাম পিথিবী মোটেও আমোদময় নয়।

Dienstag, 7. Oktober 2008

উঁচা পাহাড় ও নিহত ঘুড়া বিটল বানর ও আমি

কুনো এক শনিবার দুফুর বেলা
একটা উঁচা পাহাড় আর একটা নিহত ঘুড়া
বইসা বইসা গান গাইতে ছিল
আমি গান থামিয়া কইলাম,
পিলিজ আমারে এট্টু দীক্ষা দেন। খুব হেসেখেলেবেঁচেবর্তেখাই।
উহারা কইল, হাহাহাহ হাহাহাহাহ। ইহা তো খুবোই আমোদের কতা..কিন্তু আমরা যে নিতান্তই বুকাচুদা। দীক্ষা দিবার শিক্ষাই যে আমাগের নাই!
কহিলাম, তা হবে হয়তো। কিন্তু এখন আমি দীক্ষা লইতে কোথায়ই বা যাই?
উহারা ক্ষণকাল চিন্তা করিয়া কহিল, তুমি উত্তরে যাউ। উখানে এক প্রগলভা নারীর বাস। উহার কাছথন দীক্ষা লইয়া লও।
চলিলাম উত্তরের পথে। হাঁটিতে হাঁটিতে কিলান্তপ্রায়
পথিমদ্যে হঠাৎ দেখা এক বিটল বানরের
কহিলাম, হে পরম ভ্রাতামার, তুমি কি কহিতে পারো অত্রাঞ্চলে বসবাসরত কুনো প্রগলভা নারীর কথা?
কুথায় তাহার সাং কুথায়ইবা সাকিন?
বিটল বানর হাতের কদলী ফুটাইতে ফুটাইতে কহিল,
খুব পারি।
অবাক মানিয়া কহিলাম, খুব পারো?!
তবে হামাক ওইস্থানে লইয়া যাও।
বিটল বানর কহিল, তাহার আগে একটা কদলী খাইয়া লও।
কহিলাম, ক্যানে ক্যানে? আমি পরিছ্রান্ত বটে, ক্ষুদার্ধ তো নই..
বিটল বানর কহিল, তাহা জানি বৈকি? কিন্তু ব্রাদার হোচিমিন,
প্রগলভা নারীর কাছে যাইবার ইহাই যে উপায়।
কহিলাম, যেমন যেমন?
বিটল বানর কৎকৎ করিয়া কদলী ভক্ষণরত অবস্থাতেই কহিল,
এট্টু পরে তুমিউ যে আমার নগাল হইয়া যাইবাগা!
তৎক্ষণাৎ বুঝিলাম, প্রগলভারা কেবলই বানর বানায়।

অপৃথিবী

তবু এই নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ভালো লাগে
ভালো লাগে পৃথিবীর প্রেম ও অনিশ্চয়তার ডিম ভেঙে কুসুম খাউয়া
ভালো লাগে রতিহীন গতিহীন স্মৃতিবিহীন সন্ধ্যাবেলা
গাংচিল ও সমুদ্রের সম্পর্ক মেপে সামদ্রিক হাওয়া খাউয়া
ভালো লাগে তুমাকে আমাকে এবং পরিচারকের ভালা ব্যবহারে
রাতের আহার বিহার ও কানামাছি ভো ভো খেলা
অথচ ম্যালাদিন বাদে গতরাতে
ঘুমঘোরে স্বপ্ন এসে নিয়ে গিয়েছিল
অপৃথিবীর কোনো এক অদ্ভুত গ্রামে
সেখানে লোকেরা ভাত দিয়ে দুধভাত খায়
নদী থেকে তুলে আনে মদের পাহাড়
গাংচিল গড়াতে গড়াতে বানর সাজে
লোকেরা নিঃশব্দেও হাসে না
বাসে না ভালো তুমাকে আমাকে কিংবা কাউকেও।

অসমাপ্ত

Freitag, 3. Oktober 2008

এবং পতও আইড়া কাইড়া

টোয়েন্টি নাইম খেলা শিখার পর মুনে হইল
পিথিমীতে ইয়ার চাইয়া বড় আর ভালো কুনো খেলা নাই
অথচ যেদিন তিন তাস শিকলাম
মাগীর জুড়া দিয়া মরাদোনার জুড়া মাইরা
তিনশ' ট্যাকা পকটে তুললাম
তারপর নবীনগর, তিন পেলেট ভুনাখিচুরির পর একটা বুইড়া কোকের বোতল
বিশ্বজিৎরে নিয়া শ্যাষ করার পর মুনে হইল
টুয়েন্টি নাইম কুনো খেলাই না। একটা নিস্তরঙ্গ আইড়াকাইড়া মাত্র- যা পিথিমীতে না থাকলেউ চলতো।
ইয়ার পর শিকলাম প্রেম খেলা। খেলিবার পর মুনে হইল আহা যেন মধুরসা! সর্বনাশা মধুরসা খেয়ে দাঁত লাল হলে প্রেমিকা চলিয়া যাইবার উপক্রম করে।
বলিলাম, কী ব্যাপার! কেন চলিয়া যাইবে...আমাকে ফেলে?
প্রেমিকা কিছু বলে না, শুধুই চলিয়া যাইতে থাকে
আমি পিছু ডাকি, শোনো কঙ্কা, হে কঙ্কাবতী প্রিয় প্রেমিকা আমার। কথা শোনো... মতিচ্ছন্ন হইয়ো না আর
তথাপি সে কথা শুনে না, জোরে চলিয়া যায়।
এ পর্যন্ত সবই ঠিকঠাক। কিন্তু দিনকয়েক পরে
প্রেমিকারে দেখিলাম পরাণের দুস্তর লগে
বুঝিলাম, উহারা পচুর প্রেম খাচ্ছে।
খাচ্চে তো খাক, আমার অসুবিদা কুথায়?
অসুবিধা নাই জানিয়াও দেখিলাম বুকে পচুর অসুবিধা হচ্চে
অসুবিধাকে সুবিধা করিতে বুক চাপিয়া ধরিয়া
মটকা মারিয়া পড়িয়া রহিলাম যতক্ষণ না ব্যথা সারে
কিন্তু পিথিমীর কুনো একদিন পরাণের বন্ধু পাগল হইয়া কাছে আসিল। ধুনফুন নানা আলোচনা শ্যাষে কহিল, বন্ধুবর মাফ করিয়া দাও। কহিলাম, তুমি তো কুনো পাপ করো নাই? তবে মাফ মাঙ্বার কি হেতু? বলিয়া তাহাকে কুনোক্রমে খেদাইলাম।
দিনকয়েক পর দেকিলাম, পরাণের দুস্ত সত্যি সত্যি পাগল হইয়া বাটি ফিরিয়া গেল। প্রেমিকারে এবার অন্য লুকের সনে দেহা যায়।
সবকিছু বিবেচনা করিয়া আমি আমার বুক হইতে হাত হরাইয়া পকটে ঢুকাইলাম এবং তিন তাস খেলিতে বসিলাম।
হাঁসের বাচ্চার জুড়া লইয়া ব্লাইন্ডে বাইড়াবাইড়ি কইরা টেক্কা টপ কালারের নগে বাড়ি খাইয়া
এহাবারে ফকুর হইয়া গেলাম শেষরাইতে।
সকালে বিশ্বজিৎ মণিরে লইয়া নবীগর গেল খিচুরি মারতে। আমি ভুদাই হইয়া ঘরে ঢুকিতে যাইয়া চৌকাটের নগে বাড়ি খাইয়া পড়িয়া গেলাম ভাতরুমে। আর তখনই বুঝলাম, দুনিয়াজুড়া পচুর গিয়ানজাম এবং পতও পচুর আইড়াকাইড়া।

Samstag, 20. September 2008

এবং পতও আইড়া কাইড়া

টোয়েন্টি নাইম খেলা শিখার পর মুনে হইল
পিথিমীতে ইয়ার চাইয়া বড় আর ভালো কুনো খেলা নাই
অথচ যেদিন তিন তাস শিকলাম
মাগীর জুড়া দিয়া মরাদোনার জুড়া মাইরা
তিনশ' ট্যাকা পকটে তুললাম
তারপর নবীনগর, তিন পেলেট ভুনাখিচুরির পর একটা বুইড়া কোকের বোতল
বিশ্বজিৎরে নিয়া শ্যাষ করার পর মুনে হইল
টুয়েন্টি নাইম কুনো খেলাই না। একটা নিস্তরঙ্গ আইড়াকাইড়া মাত্র- যা পিথিমীতে না থাকলেউ চলতো।
ইয়ার পর শিকলাম প্রেম খেলা। খেলিবার পর মুনে হইল আহা যেন মধুরসা! সর্বনাশা মধুরসা খেয়ে দাঁত লাল হলে প্রেমিকা চলিয়া যাইবার উপক্রম করে।
বলিলাম, কী ব্যাপার! কেন চলিয়া যাইবে...আমাকে ফেলে?
প্রেমিকা কিছু বলে না, শুধুই চলিয়া যাইতে থাকে
আমি পিছু ডাকি, শোনো কঙ্কা, হে কঙ্কাবতী প্রিয় প্রেমিকা আমার। কথা শোনো... মতিচ্ছন্ন হইয়ো না আর
তথাপি সে কথা শুনে না, জোরে চলিয়া যায়।
এ পর্যন্ত সবই ঠিকঠাক। কিন্তু দিনকয়েক পরে
প্রেমিকারে দেখিলাম পরাণের দুস্তর লগে
বুঝিলাম, উহারা পচুর প্রেম খাচ্ছে।
খাচ্চে তো খাক, আমার অসুবিদা কুথায়?
অসুবিধা নাই জানিয়াও দেখিলাম বুকে পচুর অসুবিধা হচ্চে
অসুবিধাকে সুবিধা করিতে বুক চাপিয়া ধরিয়া
মটকা মারিয়া পড়িয়া রহিলাম যতক্ষণ না ব্যথা সারে
কিন্তু পিথিমীর কুনো একদিন পরাণের বন্ধু পাগল হইয়া কাছে আসিল। ধুনফুন নানা আলোচনা শ্যাষে কহিল, বন্ধুবর মাফ করিয়া দাও। কহিলাম, তুমি তো কুনো পাপ করো নাই? তবে মাফ মাঙ্বার কি হেতু? বলিয়া তাহাকে কুনোক্রমে খেদাইলাম।
দিনকয়েক পর দেকিলাম, পরাণের দুস্ত সত্যি সত্যি পাগল হইয়া বাটি ফিরিয়া গেল। প্রেমিকারে এবার অন্য লুকের সনে দেহা যায়।
সবকিছু বিবেচনা করিয়া আমি আমার বুক হইতে হাত হরাইয়া পকটে ঢুকাইলাম এবং তিন তাস খেলিতে বসিলাম।
হাঁসের বাচ্চার জুড়া লইয়া ব্লাইন্ডে বাইড়াবাইড়ি কইরা টেক্কা টপ কালারের নগে বাড়ি খাইয়া
এহাবারে ফকুর হইয়া গেলাম শেষরাইতে।
সকালে বিশ্বজিৎ মণিরে লইয়া নবীগর গেল খিচুরি মারতে। আমি ভুদাই হইয়া ঘরে ঢুকিতে যাইয়া চৌকাটের নগে বাড়ি খাইয়া পড়িয়া গেলাম ভাতরুমে। আর তখনই বুঝলাম, দুনিয়াজুড়া পচুর গিয়ানজাম এবং পতও পচুর আইড়াকাইড়া।

Mittwoch, 10. September 2008

কয়েকজন নিস্তরঙ্গ ভুদাই

কয়েকজন নিস্তরঙ্গ ভুদাই লালরেঙর বালগাছের নীচে দাঁড়িয়ে গল্প মারার চিষ্টা করছিল, কিন্তু হচ্ছিল না।
উহাদের একজন বলল, পিথিবিতে বেঁচে থাকার হেতু কি?
অন্যজন উত্তর করল, প্রতিদিন ভাত খাউয়া,
আরেকজন উত্তর করল, প্রতিদিন সিকারেট খাউয়া
আরেকজন উত্তর করল, প্রতিদিন প্রেম খাউয়া।
আরেকজন হাসতে হাসতে উত্তর করিল, প্রতিদিন ভাত, সিকারেট, প্রেম আর গেম খাউয়া
উহাদের উত্তরদান শেষ হইলে প্রশ্ন উত্থাপনকারী বলল,
কিন্তু আমার তা মুনে হয় না।
উত্তরদাতারা পুনরায় ভুদাই হইল এবং উহাদের মধ্যে অধিক ভুদাইটাই প্রতিক্রিয়া জানাইল, কেন, কেন কেন? কেন তুমার তাহা মুনে হয় না?
এইবার প্রশ্ন উত্থাপনকারী উত্তর করিল, প্রতিদিন এইসব খাউয়ার পরো খারাপ লাগে ক্যা?

Mittwoch, 3. September 2008

হাসপাতাল

পরাজিতরা মাথা হেট করে চলে যাবে
আর বিজয়ীরা আনন্দে লাফাবে
লাফাতে লাফাতে যখন মুষড়ে পড়বে
আমি তখন আনন্দের ক্ষণস্থায়ীত্ব দেখে মুচকি হাসি
চোখ কথা বলে। বহুকথা না বুঝে বুঝে প্রেমে পড়েছি বহুবার
আর তাতে আমার এ অগোছালো জীবন আরো বেশি ঝড়ো কাক হয়েছে
টিনের চালে বৃষ্টি..পতনের শব্দ অধোপতনেরো
গড়িয়ে গড়িয়ে কতদূর?
তবু আমি ঠিকই টের পাই বৃষ্টি আর রঙিন প্রজাপতির শত্রুতা
আর সেই ছোট্ট মেয়েটা- যার আদরের বাড়াবাড়িতে ঘর ছাড়তে চায় না বেড়ালটা
অথচ বাড়ির সব্বাই তাকে বের করে দেয় রাস্তায়।
সেই মেয়েটা যার হুহু কান্নায় অভিভূত মুগ্ধ হয়ে আমি তাকে পড়াই
রবারি মানে ডাকাতি।
আর এই ঘোর আধুনিক কালেউ
জানি, আমার পায়ের আঙ্গুলের ক্ষত
ঢের বেশি কষ্ট দেবে
তবু আমি হাসপাতালে যাব না।

মাতাল ডাইনোশুয়োর এবং আঁকা বাঘের বিড়াল চেহারা (শেষাংশ)

হুমহাম শব্দে বাস ছুটে চলছে তো চলছেই। প্যাকেটে সিগ্রেটের অনুপস্থিতি টের পায় সাইফুল। সিগ্রেটহীন প্যাকেটের মতো সাইফুলের বুকটাও শুন্য হয়ে যায়। শুন্যতার সুযোগ নিয়ে ঘাপটি মেরে থাকা বিড়ালটা লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। দাঁত বিজলিয়ে বলে 'আন্নাতারা তোমাকে কেন ভালবাসেনি তা আমি জানি?'
'কেন ভালবাসেনি.. বলে মনে হয় তোমার?' সাইফুলের প্রশ্নে বেশ গাইগুই করে বিড়ালটা, 'বলব? মন খারাপ করবে না তো?'
'মন খারাপের কী আছে' বলে সাইফুল বিড়ালটাকে আস্বস্ত করে।
'এই তো মন খারাপ করেছো? আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তোমার মুখটা কালো হয়ে যাচ্ছে। তোমার নিঃশ্বাস দীর্ঘতর হচ্ছে।'
বিরক্ত হয় সাইফুল, 'না বললে বলবে না। এত পেচাচ্ছ কেন?'
' ঠিক আছে ..বলছি' বলে বিড়ালটা সাইফুলের লম্বা এলোমেলো দাঁড়িতে একবার হাত বুলায়।
'খবরদার আমার দাঁড়িতে হাত দেবে না..' রাগে কাঁপাকাঁপি অবস্থা সাইফুলের।
'রাগ করছো কেন ভায়া..তোমার দাঁড়িগুলো তো সুন্দর, তাই...।' আরেকবার ঝটপট হাত দিয়ে, 'তবে মজার ব্যাপার কি জানো? তোমাকে ভালো না বাসলেও তোমার এই হিলবুল ছুলবুল মার্কা দাঁড়িটাকে কিন্তু ভালবাসতো আন্নাতারা।'
'ফের বাজে বকছো? দাঁড়াও সামনের স্টেশনেই সিগ্রেট কিনছি আর তোমাকেও তাড়ানোর ব্যবস্থা করছি..।'
'এজন্যই তোমাকে ভালবাসতো না আন্না' বলে বিড়ালটা লাফ দিয়ে সাইফুলের গ্রীবায় চড়ে। এবং কানে কানে বলে,'তোমাকে ভালবাসেনি কারণ তুমি নাতিদীর্ঘকায়।'
ঝা করে কানটা লাল হয়ে যায় সাইফুলের। বজ্জাত বেড়ালটাকে এক লাথিতে বাসের জানালা দিয়ে বাইরে পাঠাবার প্রস্তুতি নেয় মনে মনে। মনোভাব বুঝে বিড়াল দ্রুতই অদৃশ্য হয়ে যায়। বেশ কিছুক্ষণ পর সাইফুল কন্ডাকটরের কাঁধে বিড়ালটাকে মা চাওয়ার ভঙ্গিতে দেখতে পায়। দুঃখী দুঃখী হাসি হাসে। চেঁচিয়ে ওখান থেকেই বলে, 'শুধু তাই নয়..তোমাদের পরিবারের পকেট যে যথেষ্ট গরম নয়...সেটাও একটা কারণ হতে পারে বলেই আমার বিশ্বাস...তাছাড়া তুমিও একটু আগেভাগেই বেশি কাবু হয়েছিলে কি-না? আরো একটু জপতে দিলে এখন হয়তো একে অন্যের নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ মাড়াতে পারতে। শারীরিক আইঢাই কমানেরও হয়তো একটা ববোস্থা হয়ে যেত এদ্দিন। কিন্তু তোমার পাকা বুরবুকামিতে সব নেসফাকা হয়ে গেল। যাও একটু সম্ভাবনা ছিল তাও বরবাদ হলো তোমার আবেগের ঘনঘটায়।...আমি আগেই বলেছিলাম..রয়েসয়ে হাঁকো..। তা নয়...। সব কিছুতেই ডিগাম্বুরি...।'
একটু থেমে হাই তুলে আবার বলা শুরু করে,'অবশ্য অন্যায় কিছূ করোনি বলতেই হয়...মনে ধরেছে..ঝাপি খুলে দিয়েছো..যার নেবার নেবে...যার নয় নেবে না...ব্যাস সোজা কথা ফুরিয়ে গেল....ওত হাঙ্কি পাঙ্কির কী আছে? এবার কি কাছে আসবো ডিয়ার?'
...'না...' বলে গম্ভীর হয়ে বসে থাকে সাইফুল।
....'আরে হিবিসকাস রোজাসাইনেনসিস.. কেন বৃথা রাগ পুষছো? তোমার পকেটভর্তি টঙ্কা...ওসব পাতলা ইমোশান রাখো...সব বাস্কেটে ফেলে দাও। বৃথা প্রেম ফ্রেম নিয়ে হেদিয়ে মরছো। বরং পকেটের উত্তেজিত টাকাগুলোকে শান্ত করো...ওরা বিদ্রোহ করলো বলে। সবগুলোকে মেরে কেটে উত্তম আনন্দ বানাও। কে আন্নাতারা? সেকি জল খরচ করে না? বাইরে তাকিয়ে দেখ... কী ফাটাফাটি জোৎস্না! অথচ এমন রাতে আন্নাতারা ফান্নাতারা করে নিজেকেই ফাটিয়ে দিচ্ছো। বোকারা কতবার মরে জানো?' কর গুনে বিড়ালটা অনেকক্ষণ পড়ে বলে....'অসংখ্য বার।'
'তুমি একটা সত্যিকারের ড়বং। চোখের কারসাজি আর এলোমেলো কথাতেই গলে গেলে? আগেই বলেছিলাম সাবধান হও। পূর্বের অভিজ্ঞতা তোমার ভালো না। এভাবেই তোমাকে ফাঁদে ফেলেছিল কঙ্কা। শেষমেশ লবডঙ্কা খেয়েও তোমার হুশ হলো না। আবারও প্যাঁচ খেলতে গেলে আমাকে অগ্রাহ্য করে। এখন বোঝ চোখের পানি আর নাকের পানি কেমন জমে?'
... 'উহ্ থামবে? নাকি আমি নিজেই লাফিয়ে পড়বো জানালা দিয়ে।' সাইফুল বিরক্তির চরম সীমায় পৌঁছে। একটু চুপ করে বিড়ালটা। কিন্তু তারপরও ফিসফিসিয়ে বলতে ছাড়ে না, 'যাই করো না কেন বাছা..লাফিয়ে পড়ো না। তাইলে কেলেঙ্কারির একশেষ। সবাই বলবে প্রেমে ছঁ্যাকা খেয়ে গাড়ির নিচে প্রাণ দিয়েছে।' সাইফুল শুন্য প্যাকেটটাকে জানলা দিয়ে ছুঁড়ে মারে। বিড়ালটা সাইফুলের টোনায় বসে হাই তোলে।


কন্ডাকটর ভাড়া উত্তোলনের কাজে নেমে পড়ে। এবং প্রথমেই বাধাগ্রস্থ হয়। 'কী কস! কত ট্যাহা দিমু?
... '70 ট্যাকা।'
'ক্যা... পাচচলি্লশ ট্যাহা দেই।' যাত্রীর এমন আহাদে কন্ডাকটরের সাফ উত্তর..'তাইলে রিদের পরে যাইয়েন।'
' আইজক্যা গেলে অসুবিদা কী..'বলে কন্ডাকটরকে যুক্তির পয়েন্টে বেঁধে ফেলে যাত্রী ।
... 'অসুবিদা আছে...আইজ বাদে কাইলক্যা রিদ...এহনো যুদি মাগনা যাইবার চাইন ..তাইলে তো অসুবিদাই..।'
...'মাগনা কীরে...খানকির পুলা...দেশটারে নিজেগো বানাইয়া ফালাইছো...'
বলে চিৎকার ক্রোধাক্রান্ত যাত্রী।
'এই...ভর্দলোকের মতো কতা কন...এইডা ধলেশ্বরী বাস।' কন্ডাকটর নিজের সম্মান জিইয়ে রাখতে চায়।
'ধলেশ্বরী বাস চিনি রে চোদানির পুলা...আমরা তর রিদের বাজারের পেসেন্দার না...আঙ্গো দৈনিকি আপডাউন করার নাগে...যা ভাড়া, তাই দিছি। পাঁচচলি্লশ ট্যাকার এক পাই কম দিতাম, তাইলে কিছু কইবার পারতি। সুযোগ একটা পাইছো...আর পাবলিকের পুটকি মারবার নুইছো...' বলে ক্রোধাক্রান্ত যাত্রী কন্ডাকটরের মান সম্মান ধূলায় লুটিয়ে দেয়।
সারা বাস হেসে উঠে। কন্ডাকটর কাচুমাচু হয়, 'কী করুম...টাঙ্গাইল থিক্যা খাইল্যা বাস নিয়া আহন লাগে।'
কিন্তু কন্ডাকটরের করুণ বাস্তবতাকে মোটেই পাত্তা দেয় না ক্ষুব্ধ যাত্রী,' হ.. তাই পাবলিকের পকেট কাইট্যা লুশকান পুশাবি? তর মালিকের লাব অইলে, আঙ্গো ভাড়া কম নেয় না বড়? পাবলিকের নরোম গুয়ায় সব শালায় গুতাইবার চাও?'
সারা বাস আবারো হেসে উঠে। যে লোকটা বাসের সিট না পেয়ে নিজের কাপড়ের বস্তার সিটে চড়ে যাচ্ছিলো সে তো হাসতে হাসতে হাফানির টান ধরিয়ে ফেলে। গাড়ি খন্দে পড়ে লাফিয়ে পড়লে সেও লাফিয়ে পড়ে এক যাত্রীর ঘাড়ে। 'হুরু মিয়া! পড়ার আর জাগা পাইলেন না। একেবারে বেয়ুশ অইয়্যা যায়!' ব্যথা পাওয়া যাত্রী ফোশ করে উঠে।
'ভাইয়েরও মুনে হয় চাক্কা জ্বালাইছে..?' পাশের রসিক যাত্রী বেদনাময় পরিস্থিতি হাল্কা করে দিলে আরেক পশলা হাসিতে যোগ দেয় অন্যরা। অপমানিত ক্ষুব্ধ সিট না পাওয়া যাত্রীটা শ্লেষের সঙ্গে ,' চুদানির পুলারা রাস্তাডা এ্যাদ্দিনেও হারলো না' বলে আবার নিজের কাপড়ের বস্তয় গিয়ে বসে।
কন্ডাকটর গ্যাঞ্জাম বুঝে গাড়ির পেছনের দিক থেকে সটকে পড়ে সামনের দিক থেকে ভাড়া কাটা ধরে। সামনে বসা হুজ্জতে ইজ্জত খোঁয়াতে নারাজ ভদ্রলোকরা কোনো হাঙ্গামা ছাড়াই 45 টাকার ভাড়া 70 টাকা দিয়ে দিতে থাকলো।


সাইফুলের নাক বেয়ে একটা গরম দীর্ঘশ্বাস বাসের জানালা গলে বেরতেই বাতাসের তোড়ে উড়ে যায়। সাইফুলের নাজুক হৃদয় ক্রমেই পুড়ে যায় মিষ্টি বিড়ালের রসালো চাটে। তো সেই বোম্বাস্টিং চাঁদনী রাতে, বন্ধুসমেত আন্নাতারা হলে চলে গেলে, সাইফুল কোথাও চলে যেতে পারে না সহসা। কালভার্টেই বসে থাকে দীর্ঘক্ষণ। মনমরা। মাথার ভেতর থেকে খসে পড়ে জারুলের বেগুনী বন, কৃষ্ণচূঁড়ার লাল বন, বান্দর লাঠির হলুদ বন, বন্ধ হয় জঙ্গুলে মেয়েদের ঘুরে ঘুরে নাচা। প্রান্তরে এক মাতাল ডাইনোশুয়োর এসে ঝ্যাঙন ঝ্যাংগং শব্দে ভেঙে ফেলে বনের সমস্তগাছ, ফুল, পাখি, লতা পাতা, দাবানল ছড়িয়ে দেয় বনময়। সাইফুল আগুনে পোড়া আহত পাখির মতোই টলোমলো পায়ে উঠে দাঁড়ায় এবং হাঁটতে থাকে এলোমেলো।


উদ্দেশ্যহীন বহুক্ষণ হেঁটে যখন সেটাকেও উদ্দেশ্যহীন মনে হতে থাকে তখনই সাইফুল 301 নম্বর রুমে ফিরে আসে। 'কীরে অলুম্বুস এতক্ষণ কোথায় ছিলি?' সাইফুলকে দেখে চোখ বড় বড় করে অনজন আরো বলে, 'জানিস এর মধ্যে কত কাণ্ড? ঝন্টুকে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে.. রিকশাওয়ালা মামা বাড়ি ফিরেছে?' অনজনের পেকে উঠা ব্রন শুকিয়ে যেতে বসেছে, চোখের কোলে কালো দাগ অস্পষ্ট হতে শুরু করেছে।


সাইফুল ছেঁড়া ছেঁড়া শুনে শুকনো হাসে। উত্তর দিতে ইচ্ছা করে না তার। অনজনের উৎসাহ তাতে কমে না ' জানিস এদিকে আমরা রিকশাওয়ালা মামাকে চাঁদার টাকা দিয়ে একটা নতুন রিকশা কিনে দিচ্ছি? আরেকটু সুস্থ হলেই সে রিকশা চালাতে পারবে।'
সাইফুল আর পারে না। চিৎকার করে উঠে,' তাতে আমার কোন বাল ফেলানি গেছে?' অনজন থমকায়, পরণেই সরু করে ফেলে চোখ। কী যেন বোঝে, কী যেন বোঝে না। সাইফুলের কাঁধে হাত রাখে, আদরের চাপ দেয়,' কী হয়েছে?' জানতে চায়।
সাইফুল অসহায় হয়,' জানি না।'
অনজন ছাড়ে না,'আমাকে বল।'
'সম্ভবত আমি বোধহয় প্রেমে পড়েছি।' সাইফুল লাজুক হাসে।
অথচ ঠাশ ঠাশ করে হেসে উঠে অনজন। প্রাণখোলা। ' এই কথা? আমি ভাবলাম জুয়া খেলে সর্বস্বান্ত হয়ে ফিরলি বুঝি?'
'যা শালা! ব্যাপারটা হাসি ঠাট্টার পর্যায়ে নেই।' সাইফুল মনুণ্ন হয়।
'সে তোর চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। তো ভদ্রমহিলাটি কে?' আয়েশি ভঙ্গিতে সিগ্রেট ধরায় অনজন।
'আন্নাতারা চৌধুরী।' সাইফুল অনজনের চোখের দিকে তাকায় না।
'আন্নাটারা চৌঢুরী। হিউজ বিগ শট খেলেছিস, চান্স আছে লাইনের চার পাঁচ গজ আগেই ধরা খেয়ে যাওয়ার।' অনজন পরপর তিনটা রিং ছাড়ে ধোঁয়ার।
'কেন?' সাইফুল ঘুরে দাঁড়ায় এবং অনজনের চোখের দিকে তাকায়।
' মিসটাইমিং হওয়ার সম্ভাবনা যেমন প্রবল, তেমনি গেমটা তুমুল প্রতিদ্বিন্দ্বতাপূর্ণ হবে বলেই আশা করছি। যদ্দুর শুনেছি, এ লাইনে ইতোমধ্যে বেশ ক'জনই নাম লিখিয়েছে।'
' তার মানে আমার সম্ভাবনা একেবারে নেই বললেই চলে?'
অনজনের ধারালো গোঁফ আরো সুচালো হয়। কী যেন ভাবার চেষ্টা করে, খাতায় একটা বাঘ আঁকে যার চেহারা বিড়ালের মতোই বোকাটে। কলমটা ছুঁড়ে ফেলে বলে,' না, আমি তা বলছি না, তবে এটা একটা জটিল ইকুয়েশন।'
সাইফুল ধৈর্য হারায়,' একটু সরল করে বল।'
অনজন একমুখ ধোঁয়া ছেড়ে বলে,' তোর ব্যাপারটি কি আন্না জানে?'
আন্নাতারা যে জানে না, ব্যাপারটি যে তা না, সেটা যে সাইফুল বোঝে না, ব্যাপারটি তাও না। ফলে দ্বিধান্বিত সাইফুলকে বলতেই হয়,' সম্ভবত না।'
'তাহলে ওকে আগে জানা। তারপর দেখ ও কী বলে।' অনজন ব্যাপারটির অতি সরলীকরণ করে দেয়।
'যদি না করে?' সাইফুল মরমে মরে যায়।
' হাঁও তো করতে পারে, নাকি?' অনজন সম্ভাবনাকে খারিজ করে দেয় না।
সাইফুল তবু গাইগুই করে,' যদি না করে তখন কী হবে ভাবতে পারিস?'
'খুব পারি। তুই শালা ধনে প্রাণে মারা যাবি, এইতো? আবার কী' অনজন এবার ঠা ঠা করে হাসে। সাইফুলও হাসে, তবে সে হাসিতে জোর নেই আগের মতো। অনজন কলমটা কুড়িয়ে এনে আরো একটা বাঘ আঁকে, যার চেহারা মাদী বিড়ালের মতো পানসে। পাশে লেখে আন্নাতারা + সাইফুল। আর বলে,' আয়নায় নিজের চেহারা দেখেছিস?' সাইফুল কাঁচুমাচু হয়।
' আর দু'দিন এ কথা চেপে রাখলে নির্ঘাৎ টেঁসে যাবি। ভালো চাস তো তাড়াতাড়ি বলে ব্যাপারটার একটা হেস্তনেস্তকর। নইলে তুই শালা অলুম্বুস এমনিতেই মরে যাবি।' অনজন এবার একটা রিকশা আঁকে এবং রিকশার চাকার নিচে লেখে রিকশাওয়ালা। সাইফুল দোনোমনো করে বলেই ফেলে,' এখনই কি বলবো?'
'যা শালা..এখন কয়টা বাজে খেয়াল আছে? রাত তিনটা। সকালে উঠে বলিস।'


সাইফুল কাথা টেনে মাথা গুঁজে দেয় কাথার ভেতর। কাথার ভেতর ধীরে ধীরে গজিয়ে উঠে জারুলের বেগুনি বন। কৃষ্ণচুঁড়ার লাল বন। বাঁদর লাঠির হলুদ বন। জঙ্গুলে মেয়েরা বেগুনী লালে হলুদে ইচ্ছেমতো সাজে। তারপর হাতে হাত ধরে গোল হয়ে ঘুরে ঘুরে নাচে। চুয়ের নেশায় তাদের ঢুলুঢুলু আখি, বুকে গোল্লাকার নিরীহ নরোম পাখি- এ রাতে সবই দিলখোলা। দূরে কোথাও বাঘ ডাকে। সাইফুল ঘুরে বেড়ায় জোসনায় ধুয়ে যাওয়া বনময়। খানিক পরেই আন্নাতারা আসে খুব অল্যে, মাথায় লতায় পাতায় জড়ানো তৃণ গুল্মের মুকুট। বনের গাছেরা হেসে উঠে অযথা। গাছে বসে থাকা পাখিরা গান ধরে সুখের। আন্না এগিয়ে আসে বড় ধীর গতিতে। এতটাই যে অসহ্য ঠেকে। চোখের কোণ বেয়ে নেমে আসে জল, বালিশ হয়তো ভেজে, সাইফুলের কি আর সে খেয়াল আছে?


আন্নাতারা এলে, বোম্বাস্টিং চাঁদের রাতে, নির্দিষ্ট ক্ষণে, নির্দিষ্ট স্থানে, কথামতোন, সাইফুল ভুলে যায় পৃথিবীর সব। যতটা পারে আলগোছে হাত ধরে। কিছু না বলার আনন্দে দেখতে থাকে নিজেরা নিজেদের। দেখা শেষ হলে, যেহেতু শেষ হয় সবই, হো হো হিহি হাসিতে ফেটে পড়ে, দৌড়ায় দু'জনকে দু'জনায় ধরবার, ধরা দেবার আনন্দে, বনময়।

হাসির শব্দে ডাইনোশুয়োর আসে, যথারীতি। ঝ্যাঙ্গং ঝ্যাঙ্গন চিৎকারে ফেটে পড়ে বনময়। বীভৎস আনন্দে ভেঙে ফেলে বৃরে গ্রীবা, পাখির গান, ফুলের সৌরভ। জীঘাংসার আগুনে পুড়িয়ে দেয় গোটা অরণ্যানী। ভয়ে বিবর্ণ আন্নাতারা-সাইফুল ছুটতে থাকে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে, কখনো ছোট টিলা পেরিয়ে, আবারো কখনো বা রু ফসলের মাঠ, কখনো বা জলহীন ছোট্ট নদী। তারপর ওরা চলে আসে এক ভিন গাঁয়ে।

জীর্ণ কুটিরগুলো দাঁড়িয়ে আছে জবুথবু, জন নেই, মনিষ্যি নেই, নেই পশু পীরও দেখা। সবই রুক্ষ বেজায় খটখটে, সবুজের লেশ নেই। সাইফুল আন্নার চোখের দিক তাকায় সেখানেও একই জিজ্ঞাসা। সাইফুল চিৎকার করে ডাকে 'কেউ আছেন?' একবার দুই বার তিনবার। কোনো সাড়া নেই, শব্দ নেই। দু'জনই এবার দুজনের চোখে তাকায়, দু'জনের চোখেই একই জিজ্ঞাসা, ভয় ভয় ভাব। ভয় কাটাতেই সাইফুল আরো জোরে চিৎকার করে ওঠে,' গ্রামে কেউ আছেন?' আন্নাতারাও চেঁচিয়ে ওঠে, 'আমাদের সাহায্য দরকার, আমরা বিপদে পড়েছি।' মনক্ষুণ্ন হয় সাইফুল, বিপদে পড়ার কথাটাকে সে ভালোভাবে নেয় না। আন্নার বোকামিতে খানিকটা বিরক্তও হয়। আবার মায়াও লাগে। আশেপাশে কেউ নেই দেখে টুক করে চুমু খেয়ে সাইফুল আবার চেঁচিয়ে ওঠে,' কেউ আছেন? কেউ কি নেই?' মনে মনে বলে কোনো শালার পুত্রই কি নেই?

ঘড়ঘড়ে একটা আওয়াজ শোনা যায়, হঠাৎ অসঙ্ষ্ট। সাইফুল শুনতে পায় না, আন্নাতারা কিন্তু ঠিকই শোনে 'সাই..কোনো শব্দ পেয়েছো?'
না তো! আবারো ডেকে উঠতে যায়, 'আমি মনে হয় পেয়েছি' আন্নাতারা এ দাবি তাকে থামিয়ে দেয়। 'কচু শুনেছো বলে আন্নাতারা কান মুচড়ে দিতে যায় 'এতক্ষণ ধরে চেচাচ্ছি কোনো শব্দ পেলাম না। আর তুমি পেয়েছো।' আন্নাতারা তার কানদুটোকে ধরতে দেয় না সাইফুলকে, তার আগেই বলেই 'ওই যে শোনো। শব্দটা আবার হচ্ছে।' সাইফুলও মনোযোগী কান পাতে। ঘড়ঘড়ে একটা শব্দ এবার সাইফুলও শুনতে পায়। সতর্ক হয় যে কোনো কিছুর মোকাবিলায়।
' হাঁরের নগাল ক্যারা চিল্লায়?' বলে মানুষের গলায় কে যেন বলে উঠে। আন্নাতারা চমকে গিয়ে সাইফুলের গায়ে লেপ্টে দাঁড়ায়। চাদরে ঢাকা একটা জবুথবু মানুষ এসে ওদের কাছাকাছি দাঁড়ায়। ' আফনেরাই চিল্লাইতাছেন না বড়?'
সাইফুল জবুথবু মার্কা লোকটা যে মানুষই, নিশ্চিত হলে হাফ ছেড়ে বলে,' হাঁ আমরাই।'
' আফনেরা ক্যারা?' জবুথবু লোকটা তার খুনখুনে বৃদ্ধ গলায় আরো জানতে চায়।
'আমরা ভিন গাঁয়ের মানুষ।'
' ক্যা? আফনেরা জানেন না যে এই গেরামে অভিশাপ নাগছে?'
'কীসের অভিশাপ।'
'বুজবার পারতাছেন না?'
সাইফুলের ধন্দ লাগে, সে ঠিকই বুঝতে পারে, তারপরও সেটা যদি সঠিক না হয়, তবে বোকামির খপ্পড়ে পড়ার চান্স থাকে। তাই সে চুপ করে থাকাটাকেই শ্রেয় মনে করে।

তাই বৃদ্ধই চেঁচিয়ে উঠে,' ক্যা? দেকতাছেন না, কোনো গাছ নাই পালা নাই, জন নাই, মনিষ্যি নাই, গরু আঁস মুরগি কিচ্ছু নাই?'
'হ্যাঁ..হ্যাঁ সেতো ঠিকই। সত্যিই তো আমরা কিছুই দেখিনি।' বোকামিটাকে সাইফুল বৃদ্ধকে উৎসাহ দানের টনিক হিসাবে ব্যবহার করে। তাই বৃদ্ধও না জানা লোককে জানাবার দায় নিয়ে ভড়ভড় করে বলে,' এইন্যা ব্যাকই আছিলো আমাগো গেরামে।'
'কিন্তু গেলো কোথায়' সাইফুল প্রশ্ন করে বৃদ্ধকে নিজের ইচ্ছেমতো এগিয়ে নিয়ে যায়।
' হে কতা ক্যারা কইবো, আর ক্যারাই বান হুনবো?'
'আমি শুনতে চাই 'বলে আন্নাতারাও সাইফুলের মতো একই কাজ করে। তবে না জেনে, অতি কৌতূহলে।
' ফইজুদ্দি, তুফাজ্জল, ছাওমিয়া ওরা ব্যাকেই আছাল। কইলাম সার দিয়্যা জমির পুটকি মাইরো না। আমার কতা তো হুনলোই উইল্টা কইলো 'শরবেশ..তুই কিন্তুক পছা কতা কইস না, আঙ্গো ইসাব মতো আঙ্গো চলবার দে। তর পছন্দ না অয়, বাইত্তে যাইয়্যা বউয়ের বুনি টানগা..এনে আহিস্যা।' আমি নাহি পছা কতা কই? এহন তরা কনে? ক্যারা বউয়ের বুনি টানতাছে? মইরা সাফা অইয়্যা গেছে গা হালারা। হালারা মরছে তো মরছেই, বউ পুলাহান হুইদ্দা মারছে। আমার কষ্ট অনেই। ওগো বউ পুলাহানরা তো কুনো অন্যায় করে নাই, তারা মরলো ক্যা?
তাপফরও আমি বুছার নগাল বার বার গেছি, ওই ফজা..ওই ছাও মিয়া ক্ষেতে সার দিইস না...দেইস নারে দেইস না। আমার কতা ক্যারা হুনে। ওগো তহন বাক বাক্কুম দশা। দশ মুণ, বারো মুণ কইরা ধান পায় এক ক্ষেতেত্থন। চোকে তহন লুব আর লুব। বেশি বেশি কইরা সার মারে, নানান পদের সার। ঢিপকল দিয়্যা পানি তুলে। আরো কত ধুনফুন সিস্টিম। ওরা তো আর জানে না মাটির তল দিয়্যা কী ঘইঠ্যা যাইতাছে। আমি টের পাই, বুক ধরফড় কইরা কাঁফে। পানি খাই বিষের নগাল তিতা মুনে অয়, ওগো ক্ষেতের ধানের চাইল দিয়্যা একদিন ভাত রানছিলাম, খাইয়্যা হারি নাই। বুঝবার পারলাম বিষ ছড়াইতাছে।

মান সম্মান ভাইঙ্গ্যা একদিন ওগোরে আমার মুনের কতাডা কইয়াই ফালাইলাম। ওরা আমার কতা হুইনা খ্যাকখ্যাক কইরা আসলো আর কইলো,' বুইড়্যা অইয়্যা গেলি গা শরবেশ, তাও তর নইটামি গেল না। বাইত্তে যাইয়্যা বউয়ের বুনি টান গা।' ইয়্যার আর বছরও ঘুইরা আইলো না। ফাস্টে মরলো ছাও মিয়া। ওর পাওয়ের মইদ্যে কাটাগাড়ার নগাল কী জানি অইছিলো। ডাক্তার কয়্যা হারলো না কিছুই। এরপর গেল তুফাজ্জল। ওরও ওইরহমই কি জানি অইছিলো। এরপরেই শুরু অইল আসল খেল। ক্ষেতের ফসল পাকার আগেই হলুদ অইয়্যা মইরা যায় গা। যতই সার মারে সবুজ আর অয় না। ফজার মাতা খারাপ। একদিন অগো অন দিয়্যা যাইবার নুইছি ফজা ডাইক্যা কয়,' শরবেশ ফসল তো কিছুই পাইল্যাম না।' আমি কইল্যাম কেমনে পাবি? বিশ তিরিশ বছর তো জমিডারে লুইট্যা পুইট্যা খাইলি, এহন আর চাস ক্যা?'
ফজা কতা কয় না। এর পরের বছর যে বীজ ছিটাইলো তা থিকা কুনো চারাই অইলো না। না খাইয়্যা মইরা গেল ফজা, ফজার বউ আর আষ্টজন পুলাহান। তুফাজ্জলের বউ শহরে গেল গা, কুলে ম্যায়া নিয়্যা, চাইর ঘর তাঁতি আছিলো ওরাও গেল গা একদিন। এরপর দিন যায় খালি মরার খবর হুনি। একদিন দেখলাম আমি ছাড়া গেরামে আর কেউই নাই। আরো ছয়মাস পরে দেখলাম আমাগো গেরামের চাইরমুইড়্যা সাত গেরামের কেউই নাই। অভিশাপ নাগছে..,.অভিশাপ।'


কথা বলতে বলতে বুড়োর মুখে ফেনা কাটে। বড় এক ঢোক গিলে সাইফুলের দিকে তাকিয়ে বলে,' তা আফনেরা এইহানে মরবার আইলেন ক্যা?'
' আমাদেরও যে একই দশা...জঙ্গলে ডাইনোশুয়োর নেমেছে। ফুল বৃক্ষ লতা পাতা সব তছনছ করে ভেঙে ফেলেছে, আগুন ধরিয়ে দিয়েছে পুরো জঙ্গলে।'
' ব্যাবকতে মিলা হেই ডাইনা হালার আড্ডি গুড্ডি ভাইঙ্গা চহির তলে বাইন্দা রাকলেন না ক্যা?' বুড়ো পরামর্শ বাতলায়।
' দাদা এইটা একটা উত্তরাধুনিক ডাইনোশুয়োর, রাক্ষস আর খারি দজ্জালের চাইতেও খারাপ।' সাইফুল অপারগতা জানায়।
'তাইলে তো ঠিকোই আছে, সামান্য এক সারের নগেই আমরা পারলাম না। আর আদুনিক ডাইনাশুয়ারের নগে আফনেরা পারবেন কেমনে?' বুড়ো ব্যাপারটা বুঝে, বুঝেই বলে,' ঠিক আছে মন চাইলে আমাগো এনে থাহা হারেন, কিন্তুক খাইবেন কি? মাটির তলে যে কয়ডা চিড়া মুড়ি রাকছি, তা দিয়্যা মাস তিনিও তো চলবো না তিনজনের। তয় পরিশ্রম করা হারলে জমি থিক্যা নতুন আলু তুলা হারুম। তা আফনেগো যে আদুইরা শইল দেকতাছি, আফনেরা কি পারবেন খাটা খাটনির কাম? '
' পরিশ্রম করতে আমাদের কোনো অসুবিধা নাই। কিন্তু আপনাদের জমিতে তো বীজই গজায় না?' সাইফুল আন্নাতারার দিকে তাকিয়ে সমর্থন আদায় করে, আন্নাতারাও হ্যাঁসূচক মাথা নাড়ে,' তাইতো!'
বুড়ো হাসে,' খাড়াইতেই ভুইল্যা গেলেন গা? আমার এক টুকরা পালানে কেউরেই সার দিবার দেই নাই, ওইডা দিয়্যাই চলতাছি। তাছাড়া অভিশাপের চাইর পাঁচ বছর কাইট্যা গেল গা। ফজার ক্ষেতে কয়ডা ডাঙ্গার বীছি ছিটাইয়্যা দিছিলাম..কয়দিন আগে..একটা দুইড্যা যে জ্বালাইতাছে না, তাও আবার না। তয় পানির খুব সমেস্যা। পালানে একটা কুয়া কাটছি, পানি যে নাই, তা না, আছে। তয় অনেক নিচে খুব কষ্ট কইরা তুলন নাগে। আফনেরা যোয়ান মর্দ, ফূর্তি কইরা যেমুন গতর চাষ দ্যান, তেমুন কইরা জমি চাষ দিলে এই গেরামেই আমি আবার সোনা ফলাইবার পারুম। ' চকিতে আন্না-সাইফুল চোখাচখি করে আর গা ছমছমে লজ্জায় লাল হয় তারা। বুড়া কিক খিক করে হাসে আর বলে ওই কুণার ঘরে আফনেরা থাহেন। আফনেগো নিগ্যা আমি চাইড্ডা চিড়া নিহা আহি।'

এরপর কাঁথার তলে সাইফুল দেখতে থাকে হাড়ভাঙা পরিশ্রমের সব দৃশ্যাবলি, ঘামে গরমে জেরবার সাইফুল ভীষণ অনুর্বর জমি চাষে নামে দিনের বেলা। আর রাতের বেলায় আন্নার তুমুল উর্বর গাত্রভূমিতে চালায় সুতীব্র লাঙলের ফলা। জমে উঠে প্রেম আর পরিশ্রমের সুনিবিড় খেলা। অথচ তখন ভয়ানক চৈত্র মাস, যখন একশ' টাকার নোট শুকিয়ে এক টাকা হয়ে যায়। সেই সময় উত্তর দিক থেকে একটা অচেনা লোক এগিয়ে আসে সাইফুলদের গ্রামে। কাছে আসতেই সাইফুল তার নাম জিজ্ঞেস করে। লোকটা উত্তর দেয়,' আমার নাম মাসানুবুফুকুউকা।' বলতে না বলতেই বড় বড় ফোটায় নেমে আসে তুমুল বৃষ্টি, বহু আকাঙ্ক্ষিত।'
কাথার বাইরে ঠাঠা হাসিতে আবারো ফেটে পড়ে অনজন অযথা। সামনে বসে থাকা তাপস জিজ্ঞেস করে,' কী হয়েছে, অনজন দা, হাসতেছেন কেন?'
অনজন উত্তর দেয়,' গাধাটায় আবারো প্রেমে পড়েছে।'


গাড়ি ঘোড়ার মতোই দৌড়ায় তীব্র বেগে। কন্ডাকটর সামনের দিকে ভাড়া কেটে পুনরায় ফিরে আসে পেছনে 'কী ভাড়া দিবাইন ন্যাহ?'
' ভাড়া না তরে হাদলাম। তুইতি না নিলি ন্যা?' সাফ জানিয়ে দেয় এক যাত্রী।
' কত জানি দিছিলান?'
' ক্যা? ভাড়া যা তাই। পাঁচচলি্লশ ট্যাহা।'
' আজক্যার ভাড়া তো পাঁচচলি্লশ ন্যা। সত্তর ট্যাকা।'
' তুই কইলেই মানমু?'
' ব্যাকেই তো মানলো।'
' ব্যাকে গু খাইলে আমিও গু খামু? একটু থেমে আরো বলে, 'ব্যাকের তো কালা ট্যাহা আছে, আমার আছে না বড়?'
' ওই সুমস্ত ভাবের কথা বাইত্তে যাইয়্যা কাক্কীর নগে প্যাঁচাল পাইরেন। এহন চালু কইরা পকোট থিক্যা সত্তরডা ট্যাহা বাইর করেন। চালু করেন... বলে ছোট্ট একটা ধমকও দেয়।
' এই জ্যান্দরের বাচ্চা কতা বার্তা ইশাব মতো কবি।'
' তোমার হাতে আবার কী ইশাব কইরা কতা কমু? ভাড়া না দিবার পারলে সামনের ইস্টিশনে ভর্দলোকের মতো আলগুস্তে বাস থিক্যা নাইম্যা যাইবা।' যাত্রীর কেউগা চেহারা আর ময়লা জামা দেখে নিশ্চিন্ত মনে কন্ডাকটর আপনে আজ্ঞের ধার ধারা শেষ করে দেয়। কিন্তু সেটা মানবে কেন অত ভালো যুক্তি বোঝা যাত্রী? ফলে ধুমাশ করে সে কন্ডাকটরের নাক প্যাঁচিয়ে একটি ঘুষি বসিয়ে দেয়। হতভম্ব কন্ডাকটর দু' সেকেন্ড সময় নেয় সামলে উঠার, তারপরই ধাস করে যে হাতের আঙ্গুলের খাঁজে খাঁজে টাকা রাখে, সে হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে উল্টো দিক দিয়ে কিল বসায় বাসের ছাদে আর মুখের গোল থেকে চিৎকার বেরিয়ে আসে,' ওস্তাদ গাড়ি থামান। হালায় আমারে বক্সিন দিছে।' সাংঘাতিক উপস্থিত বুদ্ধির পরিচয় দিয়ে আরো বলে,' আমার কুচ থন নয় আজার ট্যাহা কাইড়্যা নিছে। ওস্তাদ গাড়ি থামান... হালারে আমি মারুম..।'
ঘ্যাচ করে গাড়ি থামিয়ে দেয় ড্রাইভার। যাত্রীরা রা..রা করে উঠে। ভদ্রলোকদের গলা এবার সাংঘাতিক সোচ্চার' ড্রাইভার সাহেব...গাড়ি থামালেন কেন? গাড়ি চালান।' পাশে থেকে বলে উঠে,' হ..জাগাডা ভালো না...ডাকাতি অয় মাঝেমদ্যেই।' আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে যাত্রীদের মধ্যে, 'ওই ড্রাইভার..গাড়ি ধামাইল্যা ক্যা? ড্রাইভার সাব গাড়ি থামালেন ক্যান? ওই ডাইবর গাড়ি ছাড়ই। ওই চুদানির পুলা ডাইবার গাড়ি ছাড়। ড্রাইভার সাহেব, গাড়ি ছাড়ছেন না কেন?' যাত্রীরা একজোট হয়ে চিৎকার শুরু করে এবার। গাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয় ড্রাইভার। কারণ পচানব্বই ভাগ গ্যাঞ্জামও সামাল দেয়া যায়, কিন্তু একশ'ভাগ অসম্ভব।


গাড়ি আবারো ঘোড়ার মতো দৌড় শুরু করে রাস্তা ধরে। কন্ডাকটর বক্সিন মারা যাত্রীর আশেপাশেই ফোঁস ফোঁস করে ঘোরে। কিন্তু কিছু করতে না পারার নিরানন্দে হাঁসফাঁস করে। খানিকক্ষণ পরে কন্ডাকটর যখন নিঃসন্দেহ হয় প্রতিশোধ নেওয়া অসম্ভব, তখন গম্ভীর হয়ে পুনরায় ভাড়া কাটতে আরম্ভ করে। কন্ডাকটরের ব্যথামাখানো গাম্ভীর্য নাকি অজানা গ্যাঞ্জামের আশঙ্কা নাকি দয়া, সে যাই হোক যাত্রীরা আর কথা না বাড়িয়ে অতিরিক্ত পঁচিশ টাকা কন্ডাকটরের হাতে তুলে দেয়। শুধু একজন বলে.. 'কন্ট্রাকটার ভাই..পাঁচ ট্যাহা ছট আছে...বিশ্বাস করেন.. আর ট্যাহা নাইঙ্ক্যা..থাকল্যে দিয়া দিতাম।' কন্ডাকটর কথা না বলে পাঁচ টাকা কম পয়ষট্টি টাকা নিয়ে 99.98 ভাগ অনৈতিক ভাড়া কাটার মিশন সাকসেসফুল করে তোলে।


সারা রাত বানানো প্রেমে মশগুল থেকে ঘুমহীন সাইফুল ভোরের আলো ভালো করে ফোটার আগেই আন্তহলীয় দূরালাপনী যন্ত্রের সাহায্যে খুশি খুশি গলায় আন্নাতারাকে বলে ,' হ্যালো আন্নাতারা..মাসানুবুফুকুউকা ..'
আন্নাও উত্তর দেয়,' মাসানুবুফুকুউকা'
' আমি তোমাকে ভালবাসি..'
' এইগল্যা কী কন?'
'সম্ভবত.. আমি.. বোধহয়.. তোমার.. প্রেমে.. পড়েছি..।'
' আর কিছু বলবেন?'
' ন্ ননা।'
' রাখি' বলে আন্নাতারা রিসিভারের সঙ্গে রেখে দেয় পৃথিবীর সব। সাইফুলের জীবনের যত মধু, জমাকৃত রোম্যান্টিক সব প্ল্যান কিংবা একসঙ্গে ফুচকা গেলা, সিনেমা দেখা, সবই মুহুর্তেই ফালতু হয়ে যায়। টলতে টলতে রুমে ফিরে আসে সাইফুল এবং কখন যে ঘুমিয়ে যায়, কে জানে?
সকাল গড়িয়ে দুপুরে ঘুম ভাঙে, ঘুম থেকে উঠে বুকজুড়ে একটা স্থায়ী টনটনে ব্যথা টের পায়। হুহুকারের শো শো শব্দও শোনে। মুখে জল দিয়ে মলত্যাগ না করেই সাইফুল বেরিয়ে পড়ে হল থেকে। এলোমেলো হাঁটতে থাকে। ট্রান্সপোর্টে যায়, চা সিগ্রেট খায়। তারপর গিয়ে মুক্তমঞ্চের পেছনে ওই কালভার্টে গিয়ে বসে।
হঠাৎ বন থেকে বেরিয়ে আসে আন্নাতারা। কপালে সবুজ টিপ। একগাদা বন্ধুসমেত। দলটা গোল হয়ে বসে যায় হ্রদের ধারে। সাইফুল গন্তব্যহীনতায় ভুগে ওদিকেই হাঁটে।
' কত বৃষ্টি বাদলা মন উতলা
ভিজে না তো কোনো ছায়া
আলো ছায়া বনে ভাঙা ডাল দেখো
ছোট ফুল কত একা...
মাসানুবুফুকুউকা... মাসানুবুফুকুউকা..মাসানুবুফুকুউ...কা...'
এটুকু গেয়েই গায়ক বলতে থাকেন, 'মাসানুবুফুকুউকা ছিলেন একজন জাপানি প্রকৃতি বিজ্ঞানী। তার ওপর দায়িত্ব বর্তালো ফসলের ক্ষতিকারক পতঙ্গ ধ্বংসের কীটনাশক আবিষ্কারের। বানালেনও তিনি। কিন্তু কীটনাশক প্রয়োগে দেখা গেল ফসলের ক্ষতিকর পোকা মরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উপকারী পতঙ্গরাও মারা পড়লো, দেদারসে। ভাবনায় পড়লেন মাসানুবুফুকুউকা। ভীষণ ভাবনা। দিন যায় রাত যায়, নাওয়া খাওয়া ভুলে যায় মাসানুবা। দীর্ঘদিন পর.... হঠাৎ... একদিন...। মাসানুবুফুকুউকা আবিষ্কার করে বসলেন সেই প্রাকৃতিক চাষপদ্ধতি...যেখানে ব্যবহার করা হবে না কোনো রাসায়নিক সার.. কিংবা কোনো কীটনাশক। ''দু' তিন বছর ফালতু ফেলে রাখো জমিটা। এ সময় জমিতে যা গজাবে, ঘাস, লতা, গুল্ম, পাতা, সবাইকে বাড়তে দাও ফন ফন করে। মরে যাওয়ার সময় হলে মরে যেতে দাও। যেতে দাও পচে গলে ওই মাটিরই বুকে। আর তাতেই রাসায়নিক সার কীটনাশকের যন্ত্রনায় এতদিন ধরে জর্জরিত জমিটা ঘাস লতা গুল্মের পচা গলা শবটাকে পাবে যন্ত্রনা লাঘবের পাচন হিসাবে। আর এভাবেই দু' তিন মৌসুম পরেই রাসায়নিক আর কীটনাশকের দহনে জ্বলা জমিটা ফিরে পাবে অতীতের উর্বরতা। তারপর চাষ করো যা কিছু..ফলন কিন্তু একটুও কমবে না, বরং বাড়বে দ্বিগুণ তিনগুণ...। আর ক্ষতিকর পতঙ্গের কথা ভাবছো? ভয় নেই। ফসলের উপকারী পতঙ্গদের চাষ বাড়াও। ওরাই ব্যবস্থা নিবে ক্ষতিকর পোকাদের।'
' পাখিটার কথা বলি যে কারণ
আমাদেরও ডানা কাটা
গরুটার কথা বলি যে কারণ
আমাদেরও চোখ বাঁকা
মাসানুবুফুকুউকা মাসানুবুফুকুউকা মাসানুবুফুকুউ...কা...'
'মাসানুবুফুকুউকা আমাদের সময়ের হিরো। তাকে বন্ধু ভাবলেই শুধু আমরা বাঁচাতে পারি আমাদের সাতরঙা পৃথিবীটাকে, রাসায়নিক সার আর কীটনাশক আর হাইব্রিড বীজের উৎপাত থেকে।' ঝাঁকড়া চুলের গায়ক তার চুলের ভেতর আঙুল চালিয়ে উসকোখুসকো চুলগুলোকে বশে আনে। সাইফুল আন্নাতারার দিকে বহু প্রেম নিয়ে তাকায়। আন্নার আকাশ দেখা ফুরায় না। ফুরায় নানা ঢাকা থেকে আগত গায়কের সঙ্গে নানান বিষয়ে কথা বলা।
এর দিন তিনেক পরেই আন্নাতারা সাইফুলকে ডেকে নিয়ে যায় মুক্তমঞ্চের পেছনে কালভার্টে। পেছনেই বাচ্চা বট গাছ। আন্না শুরু করে ' আপনাকে কয়েকটা কথা বলতে চাই।'
সাইফুল কেঁপে উঠে আশা নিরাশার দোলায়। 'বলো' বলে দুলুনি কমায়।
'যা হয়েছে আমাতে আর আপনাতে। তার জরুরি অবসান প্রয়োজন আছে বলে কি আপনার মনে হয় না?'
'নিশ্চয়ই।' সাইফুল দিন তিনেকের হেবি বেদনাবিদুর পরিস্থিতির সত্যিই অবসান চায়।
'আপনি আমার কাছে যা চেয়েছেন, সে বিষয়ে আমার বক্তব্য কি আপনি জানতে চান?'
' হ্যাঁ চাই-ই তো'
' আমার বক্তব্য হচ্ছে আমি চাই না।'
সাইফুল কোথায় যেন কী হারানোর ব্যথা পায়, বড্ড জোরে। তারপরও সেটা ফিরে পাওয়ার লোভে শেষ চেষ্টা করে 'যদি কখনো, কোনোদিন তোমার মনে হয় তুমি চাও?'
' কখনো, কোনোদিন কোনোভাবেই আমার সেটা মনে হবে না। কারণ আমি ওভাবে ভাবি না।' মুক্তমঞ্চের পেছনে বাচ্চা বটগাছটা পর্যন্ত থরথরিয়ে কাঁপে।
খন্দে পড়ে বাস বারকয়েক লাফিয়ে উঠে। ঝাঁকিতে জেগে উঠে সাইফুলের টোনার বিড়াল। এবং প্রথমেই জিজ্ঞেস করে,' সাইফুল আমরা এখন কোথায়?'
' হাঁটুভাঙ্গা পার হলাম মাত্র।'
' আর কতণ লাগবে।'
' ঘণ্টাখানেক।'
' পকেটের টঙ্কাগুলো কি যথাস্থানেই আছে?'
' হ্যাঁ।'
' তোমার মনের বেদনা?'
'যথাস্থানেই।'
' একটুও কমেনি।'
'না'
' তুমি কি বেদনা কমাতে চাও?'
' চাই-ই তো।'
'তাহলে তোমার পকেটের টাকাগুলো ভেঙে ফূর্তি কিনতে পারো সহজেই।'
'টাকা দিয়ে ফূর্তি কেনা যায় না কি?'
' দেখো তোমার বাল গজিয়েছে তাও তো বছর দশেক হলো। তারপরও কেন এমন অবান্তর বোকাটে সব প্রশ্ন করছো?'
' প্রশ্নটা অবান্তর হবে কেন? টাকা দিয়ে যে আনন্দ ফূর্তি কেনা যায়..ব্যাপারটাই তো আমি জানি না।'
' তুমি তো আসলে জগতের কিছুই জানো না। নইলে কোন গর্দভ প্রেমে পড়ে? প্রেমে তো পড়ার কিছু নেই, তবে প্রেমে ফেলার অবশ্যই কিছু আছে।'
' তুমি কিন্তু এই চান্সে আমাকে বেশ দু'হাত নিয়ে নিচ্ছ।'
' আমি নিচ্ছি! না, তুমি দিচ্ছ?'
' আমি দেব বলেই তুমি নেবে?'
' কী বলছো এসব! মানুষ মাগনা পেলে আলকাতরা খাওয়া ছাড়ে না, আর আমি তো একটা মিথ্যাকারের বিড়াল, তুমি দেবে আর আমি নেব না?'
' কিন্তু টাকাটা তো মা বহু কষ্টে রোজগার করেছে।'
' টাকা কষ্ট করেই রোজগার করতে হয়। আর মা বাবারাই তা করে থাকে। তবে সেটা ভাঙতে হয় ফূর্তি করার জন্যই। এবং তা ছেলেমেয়েরাই ভাঙ্গে।'
' তুমি আবার ফালতু বোঝাচ্ছ।'
' আমি একদম ফালতু বোঝাচ্ছি না। তোমার বুকে যে স্থায়ী ব্যথা গেড়ে বসেছে, সেটাকে তো ঝেড়ে তাড়াতে হবে, নাকি? আর ওটাকে তাড়ানোর জন্য তোমাকে ফূর্তির রাস্তাই ধরতে হবে।'
' ফূর্তির রাস রাস্তায় কী কী পাওয়া যেতে পারে?'
' দেখ তোমার বাল পাকার আর মাত্র বছর বিশেক বাকি। তারপরও তুমি জিজ্ঞেস করছো ফূর্তির রাস্তায় কী কী পাওয়া যায়? আরে কী পাওয়া যায় না তাই জিজ্ঞেস করো।'
'ঠিক আছে ঠিক আছে...ক্ষেপে যাচ্ছ কেন?'
' পেছি না, শুধু তোমার বুরবুকামি দেখে...খারাপ লাগছে।'
' খারাপ লাগার কিছু নেই। এখন ব্যথা কমাবার উপায় বলো।'
' বেশ্যালয়ে যাও। ভালো একটা মেয়ে দেখে সারারাত প্রেম করে চলে এসো। ব্যথা কমবে। '
'কী!?'
' চোখ বড় বড় করার কিছু নেই। আমার প্রেসকিপশন মানো...ব্যথা কমবে।'
' দরকার নেই ব্যথা কমার।'
'দরকার পড়বে সাইফুল..দরকার পড়বে। নিজেকে কী ভাবো তুমি? প্রেমিক?'
'কিছুই না।'
'কিছু তো একটা ভাবোই। নইলে শুধু শুধু প্রেমে পড়তে যাবে কেন?'


এবার সাইফুল চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান ধরে পড়ে থাকে। জবাব না পেয়ে উৎসাহহীন হয়ে পড়ে অতু্যৎসাহী বিড়ালটাও। গাড়ি ঘোড়ার মতোই দৌড়ায়। রাস্তার দু'পাশের গাছেরাও। দৌড়ায় বোম্বাস্টিং চাঁদটাও।
রাত দেড়টায় হাঁপাতে হাঁপাতে গাড়ি পৌঁছায় টাঙ্গাইল পুরাণ বাসস্ট্যান্ডে। যাত্রীরা হাত পা ঝাড়া দিয়ে মোচড়া মুচড়ি করতে করতে নামতে থাকে। সাইফুলের নামতে ইচ্ছা করে না, ইচ্ছা করে না বাড়ি ফিরতে। তার মনভর্তি এখনো জমাট বেদনা, পকেটভর্তি উত্তেজিত কড়কড়ে টাকা। তারপরও সাইফুল নেমে পড়ে এবং অন্য যাত্রীদের মতোই রিকশা খোঁজায় মন দেয়। একটা রিকশা পেয়েও যায়। কিন্তু রিকশাওয়ালাকে বাড়ি যেতে না বলে যেতে বলে বেবিস্ট্যান্ডে।


বেবিস্ট্যান্ডে চিৎকারের মতোই বাজতে থাকে.. দুনিয়াকা মজা লেলো, দুনিয়াকা হামারি হায়..দুনিয়াকা হামারি হায়। খদ্দের না পাওয়া দু'চার জন বেবুশ্যে তখনো দাঁড়িয়ে। সাইফুল রুজমাখা ওইসব রঙিন মেয়েদের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। তার মাথার ভেতর ফনফন করে গজিয়ে উঠে জারুলের বেগুনি বন, কৃষ্ণচূঁড়ার লালবন, বান্দর লাঠির হলুদ বন। ইচ্ছেমতো রুজ পাওডারে সাজা নটী মেয়েদের হাত ধরে সে ঘুরে ঘুরে নাচে। বানোটির নেশায় তাদের ঢুলুঢুলু আখি, বুকের নিরীহ গোল্লাকার পাখি-সব রাতেই যা দিলখোলা। দু' কাঁধে পা ঝুলিয়ে বসা মিথ্যাকারের বিড়ালটি মুড়িভাজা হাসিতে ফেটে পড়ে। হাসি শুনে ঝ্যাঙন ঝ্যাঙ্গং শব্দে এগিয়ে আসতে থাকে যথারীতি মাতাল ডাইনোশুয়োর। স্পষ্ট হতে থাকে অনজনের আঁকা বাঘের বিড়াল চেহারা।

মাতাল ডাইনোশুয়োর এবং আঁকা বাঘের বিড়াল চেহারা

ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল যাওয়ার শেষ বাসটায় চড়ে বসলো সাইফুল। ব্যাপারটা মোটেও টাট্টু ঘোড়ায় লাফিয়ে চড়ার মতো আনন্দদায়ক ছিল না। বরং ছিল বেশ কিছুটা নিরানন্দময় আর গ্যাঞ্জামপূর্ণ। গ্যাঞ্জামের হোতা হেল্পার কন্ডাকটাররা গ্যাঞ্জাম তৈরির প্রথম ছবক হিসাবে বাসের শরীরে শক্তিশালী সব থাপ্পড় কষিয়ে যাচ্ছিল নন স্টপ। সঙ্গে ছিল লম্বা চিল্লানির টাঙ্গাইল... টাঙ্গাইল... টাঙ্গাইল... সত্তর ট্যাকা... সত্তর ট্যাকা... সত্তর ট্যাকা... লাশটিপ... লাশটিপ... গাড়ির গতিক জানিয়ে দেওয়ার ভয়াবহ অবৈজ্ঞানিক এবং তুরুত ফুরুত কার্যকরী পদ্ধতি।

যাত্রীরা যত্রতত্র অপেক্ষা করছিল টাঙ্গাইল যাওয়ার বাসের জন্যই। তবে তারা নিশ্চিত ছিলো না টাঙ্গাইল যাওয়ার শেষ বাসটি আদৌ যাবে কি-না? এ অনিশ্চয়তাপূর্ণ আর ঘোলাইট্যা পরিস্থিতি অবশ্য বাসওয়ালারাই তৈরি করেছিল। উহাদের বক্তব্য মতে, সিরিয়ালের শেষ বাসটি মিনিট বিশেক আগেই টাঙ্গাইলের উদ্দেশে পাড়ি জমিয়েছে। কিন্তু ঈদে বাড়ি যেতে উদগ্রীব বাসযাত্রীদের পকেট থেকে ফোকটে পয়সা খসানোর চান্স পেয়ে ওই বাসওয়ালারাই বেলাইনে একটি বাস নামিয়ে দিল।

আর ওদের টাঙ্গাইল...টাঙ্গাইল থাপ্পড় চিৎকার শুনেই মূলত স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়েছিল বিপদাপন্ন উদ্ভ্রানত যাত্রীরা। কিন্তু বাসওয়ালাদের এক্সট্রা 25 টাকা করে কামিয়ে নেওয়ার ধাঁধাঁটিকে কেউই খোলা মনে গ্রহণ করলো না।

অনেকেই শঙ্কায় ঘেমে গেল। যাদের বিড়ি সিগারেট ফোঁকার অভ্যাস তারা ঘন ঘন বিড়ি ফুঁকতে লাগলো। 25 ট্যাকা বেশি ভাড়া গুনবার যাতনায় নিরীহ যাত্রীদের মূত্রথলি ফুলে উঠল মূত্রত্যাগের বাসনায়। বুকের ভেতর ক্ষোভের বুঁদবুঁদ জমে। শুধু এক নং খাঁটি ভর্দলোকরা ভদ্রলোকদের মতো দাঁড়িয়ে থাকে, যারা অন্যের দুঃখ কষ্টে, আনন্দ উল্লাসে কখনই মাথা ঘামায় না।

'তা আফনে যাই কইন্ন্যা ভাই, পাঁচচলি্লশ ট্যাকার ভাড়া বাইড়্যা সত্তর ট্যাকা হইবার পারে না কুনো সুময়ই। যতই রিদের বাজার থাইক না ক্যা।' টুশকি দিয়ে ছাই ঝেড়ে এবং মাড়ির ভেতরের দিকে লুকিয়ে থাকা পানের কণাকে জিভের ডগা দিয়ে কুড়িয়ে এনে দাঁতের হাতে তুলে দিয়ে বলে, 'খুব বেশি হইলে পাঁচ দশ ট্যাকা বাইড়া পুচ্পান্ন ট্যাকা অইবার পারে। তাই বইলা তো এক্কেবারে পঁতিশ ট্যাকা বাইড়া সত্তর ট্যাকা অইবার পারে না। এইডা একটা পাইজামকি।'

হ..হ..বলে ক্রমেই পেকে ওঠা জটলা সমর্থনের সুর দেয় তাকে। জটলার অন্য আরেকজন চেঁচিয়ে উঠে 'ঠিকই কইছেন ভাই...কুনো একটা ছুতা পাইলেই অইল হালারা...দ্যাও ভাড়া বাড়িয়্যা। হরতাল অইছে... কি ত্যালের দাম বাড়ছে ...দ্যাও ভাড়া বাড়িয়্যা....বালের দাম বাড়ছে.. দ্যাও ভাড়া বাড়িয়্যা।'

জটলার সবাই শেষ কারণটায় অনেক কষ্টেও ব্যাপক হাসল। তাতে বক্তার জোশ বেড়ে গেল। বক্তব্য টেনে লম্বা করে..'এক্সিডিন অইছে কী...মালিকের বউ মরছে...দ্যাও ভাড়া বাড়িয়্যা..'
জটলা আদি রসাত্মক আলাপের ধান্দায় বেশ মনোযোগী হয়, যদি মালিকের বউয়ের কোনো রগড় শোনা যায়! কিন্তু বক্তার বক্তব্য শেষ না হতেই পেছন থেকে 'বাঁই হাত' ঢুকিয়ে দেয় আরেকজন 'এ্যারা দ্যাশটারে মগের মুল্লুক পাইছে..।' নতুন বক্তাকে দেখার জন্য জটলা যখন জোশাত্মক মুখ ঘোরাচ্ছে..ঠিক তখনই মিনা কার্টুনের টিয়া পাখির মতো কে যেন বলে বসে 'মাগীর মুল্লুক পাইছে, মাগীর মুল্লুক।'

এ কথা শোনার পর সঙ্গত কারণেই জটলা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে গেল। কোনো কিছু চিন্তা না করেই হ্যাহ্যা করে হেসে উঠল। আরেক দল হাসিতে লিপ্ত হোয়াদের প্রতি চোখে গরম নিয়ে তাকায়। ফলে অন্য আরেক দল রাজনৈতিক গ্যাঞ্জামের আশঙ্কায় দু'দাবনার মাঝখানে লেজ ঢুকিয়ে পিছিয়ে যায়।'ক্যারা কতা কইল..ক্যারা কতা কইল' বলে হৈহৈ করে উঠে রুলিং পার্টির ষণ্ডামার্কা যাত্রীরা। কিন্তু মাগীর মুল্লুকের লোকটাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না।
জটলা ফাঁকা হয়ে গেলে 'মাগীর মুল্লুক' এ বাস করা লোকটার সঙ্গী আবদার করে বসে 'একটা বিড়ি খাওয়া..।'
'ক্যা...তরে বিড়ি খাওয়াম ক্যা..?'
'এই যে তরে বাঁচাইলাম।'
'বাঁচাইলি মানে? কেমতে?'
'বাঁচাই নাই! যদি কইয়া দিতাম, কতাডা তুইই কইছত। তাইলে কি তর ছাল বাকলা থাকতো? আড্ডি দিয়্যা পাতা কাটতো না, মাইনষ্যে? '
'তাই নাহিরে? না বাঁচাইলেই পারতি। আমি কি তরে কইছিলাম...আমারে বাঁছাও গো আব্বা? আমারে মাইরা ফালাইলো গো..। ক্যারা জানি আমার পুটকির মধ্যে ডাং ঢুকাইয়া দিছে গো...'
'তুই একটা জাইরাও রে..' বলে ফোকটে বিড়ি খাওয়ার লোভ সামলায় সঙ্গী।
'সত্যি কতা কইলেই জাইরামি অয় ন্যা?'
সঙ্গীটা বুঝে যায় বিরাট ভুল হয়ে গেছে। বিড়ি তো দূরের কতা, ছাতুও খাওয়াবে না। উল্টো ঊনিশ বিশ বুঝাবে। কিন্তু সঙ্গীকে অবাক করে মাগমুল্লুকবাসী দুটো স্টার ফিল্টার সিগারেট কিনে। একটা নিজে ধরায় আরেকটা বন্ধুকে দেয়।
'বহুদ্দিন পর ফাইন একটা কতা কইছি। তাও ব্যাবাক মাইনষের সামনে। বিড়ি খাবি ক্যা? সিকারেট খা ..নি ধরা।'
আগুন ধরাতে ধরাতে বন্ধু বলে..তুই আসলেও একটা জাইরা...
কিন্তু এদিকে যারা নরোম মেয়েছেলে এবং গরম বালবাচ্চাসমেত ঈদে বাড়ি যেতে এসেছে কিংবা যারা খানিকটা ভদ্রলোক, মোটামুটি ফর্সা কাপড়ের জোরে এবং ভালবাসে হুজ্জতে ইজ্জত না হারাতে কিংবা যারা সাংঘাতিক ডরপুক, তারা সকলেই হেল্পার কন্ডাকটারের সম্মিলিত চিৎকারের লাশটিপ... লাশটিপ...টাঙ্গাইল ...টাঙ্গাইল ...শুনতে পেয়ে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়বার চেষ্টা করে বাসের গহ্বরে। ফলে হুলাহুলি, পাড়াপাড়ি, চ্যাঁচামেচি, ক্যাওম্যাও, বৃথা তর্কাতর্কি, ঝগড়াঝাটি এবং প্রায় মারামারিতে ছোটখাটো একটা দোযখে পরিণত হলো বাসের গহ্বর। বিশেষ করে ভদ্রলোকদের সিট দখলের অভদ্রতা ছিল দেখার মতো একটি বিষয়।
যারা আবার দৌড়ে পিছনে পড়ে গেল নিজেদের গাধামিতে, তারাও গাধামি ঝেড়ে ফেলে চালাকি করে বাক্স পেটরা বাসের জানালা গলে জায়গা দখলে নিল। কিন্তু জানালা গলে আসন গেলা পছন্দ হলো না অনেকেরই। বিশেষ করে যারা দৌড়ে বাসের ভিতরে ঢুকতে পেরেছিল কিন্তু আসনে পুচ্ছ ঠেকাতে পারেনি আয়েশ করে। ফলাফল বিরাট এক নাড়াই। অন্যদিকে যারা জটলা করে ঘোঁটলা পাঁকিয়ে পয়সা কমাবার ধান্দায় ছিল, তারাও লোকবল কমে যাওয়ায় আপসে পা রাখল বাসের পাদানিতে, শেষপর্যন্ত।

বাস রাস্তা ধরে ঝেড়ে দৌড় শুরু করলে গতিতে বশীভূত যাত্রীরা আপনাতেই থামিয়ে দিল বাসের ভেতরকার সকল গ্যাঞ্জাম। রাত তখন সাড়ে এগারোটা আর আকাশে ঝুলে আছে একটা ভুইট্টাবানা চাঁদ।
সাইফুলের পকেটভর্তি টাকা কিন্তু মনভর্তি বেদনা। যেইতেই বেদনা নয়, সাংঘাতিক বেদনা। বিষয়টা দু'দিনের পোষা বিড়াল হলে মানা যেত কিংবা ঝেড়ে লাথি কষিয়েই হয়তো কাটানো যেত। কিন্তু এ সে মাল নয়। দীর্ঘদিনের পোষা বিড়াল। তাই প্রথমে চোখ বেঁধে, পরে ছালায় ভরে এবং তারপর ছালার মুখ বেঁধে 'কইট্টার হাটে' ছেড়ে দিলেও লাভ নেই। রাস া চিনে, গাড়ি এবং ঘোড়া এড়িয়ে কিংবা আরো পরিষ্কার করে বললে ওদের চাকা এবং ুরের তলে না পড়ে ঠিকঠাক মতো বাড়ি ফিরে আসাটা ছিল বেদনাদায়ক বিড়ালটার জন্য ওয়ান টুর ব্যাপার।

ফলে বুদ্ধিমানের মতো ওটাকে না তাড়িয়ে, ঘুম পাড়িয়ে রাখার বাহানায় একের পর এক সিগ্রেট টেনে চলছিল সাইফুল। কিন্তু ততোধিক চালাক বিড়াল ধোয়াশাচ্ছন্ন হয়ে ঘুম পেড়ে থাকার মাল নয়। তাই মটকা মেরে পড়ে থাকার পাশাপাশি সে সাইফুলের প্রেমপূর্ণ নাজুক হৃদয়ে মিষ্টি দাঁতের কামড় না বসিয়ে রসালো জিভের চাট বসিয়ে যাচ্ছিল, মন্থর। ফলে সাইফুলের প্রেম জরোজরো ভাবটি কিছুতেই কাটছিল না।
তো এক ঝুম্পাক বৃষ্টির দিনে। যখন ভিজে চুপসে যাওয়া আন্নাতারার বুকের গোল, ফুল হয়ে ফুটেছিল সঙ্ষ্ট, তখন চোখের দুষ্ট বিড়ালটাকে ঈষৎ নাচিয়ে আন্নাতারা সাইফুলকে বলেছিল...'তো ওই কথাই রইল?'
'কোন কথা?' সাইফুল ন্যাকা সাজে, খানিকটা বোকা।
'আসছে প র্ণিমার রাতে গাঁজা খাওয়াচ্ছেন, হুহ্?'
মুক্তমঞ্চের পেছনে বাচ্চা বটগাছটা পর্যন্ত থরথর করে কেঁপে উঠেছিল..আন্নার এমনো রঙিনো বায়নায়...সাইফুল তো ছেদো লোক। ফলে বোকা বোঁদনে পরিণত হতে তার বাঁধলো না। আর এই ফাঁকে নৃত্যরত বেড়ালটাও টুক করে ঢুকে পড়ল ঢিলা ল্যাঙ্গটের তলা বেয়ে সাইফুলের নাজুক হৃদয়ে মিষ্টি দাঁতের কামড় না বসিয়ে, রসালো জিভের ঘন চাট দিতে। ফলে সাইফুলের ম্যাজম্যাজে শরীরে প্রেম জ্বরোজ্বরো ভাবটি উত্তরোত্তর বেড়েই চলছিল। যে কারণে সাইফুল শয়নে স্বপনে ঘুম জাগরণে ভাবতে বাধ্য হচ্ছিল পূর্ণিমার রাতে চুড়ান্ত উন্মাতাল আন্নাতারাকে জাপ্টে ধরে ল্যাপ্টাল্যাপ্টি খাওয়ার নানান কায়দা কানুন।
সময়মতো পূর্ণিমা আসে। আকাশে দেখা মেলে ভুইট্টাবানা চাঁদের। কিন্তু অমন বোম্বাস্টিং পূর্ণিমার রাতে যে একদল হাড় হাভাতে জ্যোতির্বিজ্ঞানী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে টেলিস্কোপ নিয়ে চাঁদ দেখার ফাঁদ পেতে বসবে, তা কে জানতো? আর আন্নাও যে ওই হুতমোপটাস যান্ত্রিক টেলিস্কোপেই জমে যাবে এবং বেমালুম হবে চাঁদনী রাতে গঞ্জিকা সেবনের প্রোগ্রাম, সেটা তো জানার কথা ছিল না সাইফুলেরও? তাই কিছুদিন ধরে একটু একটু রঙিন হওয়া সাইফুলের শ্বাস প্রশ্বাস শুরুতেই একখানা মর্মান্তিক বাড়ি খেয়ে ও বাবা গো বলে গুঙিয়ে উঠল।

বোধহয় সেটাকে ভেঙাতেই একগাদা বন্ধুসমেত ডগোমগো আন্নাতারা টেলিস্কোপের পুঙা দিয়ে যান িক চাঁদ দেখে ফিরে আসে। ফিরে আসে মুক্তমঞ্চের পেছনে বাচ্চা বটগাছটির পাশে, ছোট্ট কালভার্টটিতে। যেখানে মনমরা সাইফুল তখনো অপোয় বসেছিল অরণ্যগমনে! এবং এসেই কোনো কথা না বলে মনমরা সাইফুলের কান মুলে আন্নাতারা হেসে উঠে 'হি..হি হি হি..বাহ! আপনার কানগুলি তো বেশ নরোম!'
আচম্বিতে কানমলা খেয়ে সাইফুলের মন মরাভাবটা কোথায় যেন উড়ে যায়, একটা নিরীহ পাখির বাচ্চা হয়ে, লিঙ্গটা ফুলে উঠে কী এক অজানা আশঙ্কায়। সেবব কোনো কিছু না জেনে সাইফুলের পিঠে পিঠ ঠেকিয়ে, দু'চারটে হিউজ আমোদপূর্ণ গা ঘষটাঘষটি দিয়ে আন্নাতারা চিৎকার করে গেয়ে উঠে,
' অরণ্য ডাকে..হেইডি আইডি আয়...'
তুমুল ঝিরি ঝিরিতে কেঁপে উঠে বাচ্চা বটবৃরে সবগুলো পাতা, চাঁদ খুঁজে পায় সাইফুলের ফাঁকা মাথা। চাঁদের আলো কিলবিলিয়ে হেঁটে যায় আন্নাতারার চোখে, মুখে, নাকে, ঝকঝকে সাদা দাঁতে, চিবিয়ে খায় সাইফুলের কচি হৃদয়। চোখের কাছে চোখ মুখের কাছে মুখ নিয়ে আন্নাতারা তাই গেয়ে উঠে,
'ধরো আমি কথা বলি..কথা বলি...জংলি ভাষায়'
বিড়ালটা গুক্কুর সাপের মতোই ফশ করে ধারালো কামড় বসায় সাইফুলের নাজুক হৃদয়ে। অসহনীয় মিষ্টি বিষের ব্যথায় সাইফুলের মাথার ভেতর ফনফন করে গজিয়ে উঠে জারুলের বেগুনি বন, কৃষ্ণচূঁড়ার লালবন, বান্দর লাঠির হলুদ বন। সেইসব অদ্ভুত জঙ্গলে জঙ্গুলে মেয়েরা বেগুনি জারুলে লাল কৃষ্ণচূঁড়ায় হলুদ বাঁদর লাঠিতে ইচ্ছেমতো সাজে, হাতগুলো বেঁধে নেয় সইদের হাতে, তারপর গোল হয়ে ঘিরে ঘিরে নাচে। চুয়ের নেশায় তাদের ঢুলুঢুলু আখি, বুকের নিরীহ গোল্লাকার পাখি, সবই দিলখোলা এ রাতে।
গাড়ি ঘোড়ার মতোই ছুটতে থাকে ময়মনসিংহ রোড ধরে আরো উত্তরে। গেঁয়ো যাত্রীরা জানালার কাঁচ খুলে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দেখে। লাল নীল হলুদ সবুজ আলোয় শো শো শব্দে উড়ূজাহাজের উড়াউড়ি দেখে।
বোম্বাস্টিং চাঁদের আলোয় আন্নাতারারা গেয়ে যায় একের পর এক নিত্য নতুন গান, ভালবাসার বীজ রোপণে, আজব জংলি ভাষা শেখাতে। ধানে ক্ষেতে যেমন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ চলে তেমনি গানের ফাঁকে ফাঁকে চলে হিহি হো হো হা হা হাসি, চলে চোরা চোখের গুঢ় কারসাজি। ক্ষেতের আলে বৃক্ষচাষের মতোই আন্নার বন্ধুরা ডেকে আনে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসকে, চিলেকোঠার সেপাইকে, কাৎলাহার বিল, সারিয়াকান্দি, তমিজের বাপ আর তার নিগুঢ় খোয়াব। বাদ যান না ইলিয়াস কাঞ্চনও কিংবা কম্পোস্ট সার হিসাবে তারা ব্যবহার করে বাংলা সিনেমার হিউজ রগরগেপনা, আর কীটনাশক হিসাবে ব্যাড পিট, টপ ক্রজ আর নকল কিডম্যানদের। চলে ধুমসে ভালবাসার মাটি কোপানো, গানস এন্ড রোজেস থেকে তারা জল সিঞ্চনের কাজ সারে ডিপ কলের। সঙ্গত কারণেই আর্সেনিক নামক ভূত নামে ভালবাসার ধান ক্ষেতে। বিজাতীয় ভূতের গল্প হয়, ভূত আছে কি নেই সে নিয়ে বাঁধে তুমুল তর্ক।
তারপর যথারীতি ঈশ্বর আসেন। আন্নাতারারা চেচিয়ে উঠে, ঈশ্বর নেই। কোনোদিনও ছিল না। অথচ ক্রমেই হলুদ হয়ে মরে যেতে থাকা ভালবাসার ধানক্ষেত থেকে জ্বলজ্যান্ত আর্সেনিকগুলোকে ঝেটিয়ে তাড়াতে সাইফুল ঈশ্বরের দরবারেই কৃপা মাগে,' হে ইশ্বর.. আন্নাতারাকে আর্সেনিকমুক্ত করে দাও, ওর বন্ধুদের ভিন্ন দিকে তাড়িয়ে দাও, আন্নাতারাকে ঘন অরণ্যে নেবার তওফিক দাও, জংলি মেয়েদের মতো বেগুনি জারুলে আর লাল কৃষ্ণচূঁড়ায় হলদে বান্দর লাঠিতে সাজাও। সখীদের হাতে হাত ধরে নাচতে বলো। চুয়ের নেশায় আখি ঢুলুঢুলু করো, বুকের পাখিটাকে করে দাও আরো নরম, আরো গরম। এরপর তুমি না থাকলেও চলবে, বাকি কাজ আমার।'
ঈশ্বর মুচকি হাসেন। গান শেষ হলে, যেহেতু শেষ হয় সবই, যেভাবে আন্না এসেছিল বন্ধুসমেত, সেভাবেই চলে যায় বন্ধুসমেত। এবং সাইফুল যেভাবে কালভার্টে বসেছিল মনমরা, সেভাবেই বসে থাকে মনমরা। শুধু ওমন বোম্বাসটিং চাঁদের রাতে আন্নাকে জঙ্গলে না পাওয়ার আফসোস তার পিছু ছাড়ে না। পিছু ছাড়ে না কানমলা খাওয়ার জমকালো আবেশ।
তো, ক্যাম্পাসের এক মারমার কাটকাট দিনে পরিচয় হয়েছিল আন্নাতারাতে-সাইফুলে। যার দু'দিন আগেই নৃবিজ্ঞানের এক দুঁদে ছাত্র সাংঘাতিক এক মোটা মেয়ের প্রেমে ও কামে ধোঁকা খেয়ে পাগলপ্রায়। প্রেমবঞ্চিত প্রেমিক সন্ধ্যাবেলায় প্রেমের জ্বালা লাঘবে প্রান্তিকে এক নিরীহ রিকশাচালক মামাকে প্রচুর গুতিয়ে বসলো। ঋণগ্রস্ত মামা ক্যাম্পাসে এসেছিল রিকশা চালিয়ে ঋণমুক্ত হবার ধান্দায়। কিন্তু তার ছেদো ধান্দা দুঁদে নৃবিজ্ঞানীর ধুন্দুমারে বন্ধ হয়ে গেল।
ঢাকা থেকে ছাত্রী পড়িয়ে ক্যাম্পাসে পা রাখতেই সাইফুলের শরীর জারিয়ে উঠল নরোম মেয়েটার গরম বকুনি শুনে। 'কী সাংঘাতিক! কী নির্মম, কী অন্যায়, কী বীভৎস শয়তানি।' সাইফুল ভেবেছিল প্রেমিকটাকে বুঝি অযথাই চটকাচ্ছে! কিন্তু ডেইরিফার্ম থেকে ভাসানী হলে যাওয়ার পথে এক পথ চলতি বুড়িও সাইফুলের আরামদায়ক গরম ভাবনায় একটা চোরা মোচড় দিয়ে দিল 'আল্লায় ইয়ার বিছার করব। রিকশায়ালা মাইরা ফালান? আল্লায় সহ্য করব না। হাসরের দিনে ইয়ার বিচার অইব।'
বুড়ি অবশ্য আগে থেকেই খাপ্পা ছিল এ আজদাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর। একে তো বাপদাদা-ভাই বেরাদর-স্বামীপুতের সয় সম্পত্তি-জায়গা জমি একোয়ার করে সরকার একটা শয়তানির আখড়া বানাইছে, তার ওপর আবার এই হানকার মাগী-মর্দাদের কার্যকলাপের নানা কিচ্ছা কাহিনী বহু কান ঘুরে বুড়ির কানেও গরম ফুঁ দেয়।
ফলাফল হিসাবে বুড়ির কিড়মিড় করা শরীর ব্যাপারটাকে হজম করতে না পারায় পেটের ভিতর এতদিন তা জমাকৃত ক্ষোভ হয়ে চুপচাপ পড়েছিল। কিন্তু রিকশায়ালা মাইরা ফালানের কেস বুড়ির মরচে ধরা আগুনটাকে ফাৎ করে জ্বালিয়ে দেয়। পেট থেকে জ্বলন্ত রাগের বাঘ লাফ দিয়ে বের হলেও বুড়ি কিন্তু সাবধান হয়। কারণ শয়তানের বাচ্চারা রিকশায়ালা মাইরা ফালাইতে পারছে আর বুড়ি মারতে কতক্ষণ! তাই বুড়ির রাগের বাঘ ফিল্টার হয়ে আল্লার দায়িত্বে চলে যায়। নয়তো মরা বুড়িও হয়তো বলে ফেলত '..বেশ্যা মাগীর পুলারে ধইরা আনো..লাত্তি দিয়া ওর্ বীচি ফাটিয়্যা দেই। ওর জর্মের শিক্ক্যা দিয়া দেই। কথো বড় সাহস! রিকশ্যায়ালা মাইরা ফালাইছের' বদলে ফিল্টারিত 'আল্লায় এ্যার বিচার করব' বলে রাগের বাঘটাকে বিড়াল বানিয়ে ছেড়ে দেয় হাওয়ায়। হাওয়ায় ভাসা বুড়ির গরগরে রাগ আর নরোম মেয়েটার ওই গরম খুনসুটি সাইফুলকে ধন্দে ফেলে দেয়। সাইফুল দ্রুত পা চালায়।

317 নম্বর রুমটি প্রায়ান্ধকার। তবুও লাথি দিয়ে দরোজা খুলে সাইফুল। বাপ্পীর এই ক্যারারে... ক্যারারে, মারুফের কোন চুত মারানির পুতকে পাত্তা না দিয়ে সাইফুল উল্টো বকে উঠে,' কীরে ডাইনোশুয়োরের বাচ্চারা, সন্ধ্যা না লাগতেই ধূপকাটির গন্ধ জ্বালাইছোস, লক্ষণ তো ভালো না!' বলে একটা খৈ ভাজা হাসি দেয়।
' আরে শ্যালকপুত্র তুই! আমরা ভাবলাম কোন না কোন বান্দির বাচ্চা শত্রুতাবশত দরজার পুটকিতে লাত্তি মারছে? যাই হোক, দরোজাটা এহন তাড়াতাড়ি চাপা..' হুকুম দিয়ে বাপ্পী গঞ্জিকার সরঞ্জামাদি নতুন করে বের করে আনে।
'সেটা না হয় চাপালাম। কিন্তু তার আগে তরা আমারে কঅ.. আইজ ক্যাম্পাসের কী হইয়াছে?.' হাত দুটোকে নাটকীয়ভাবে দু'দিকে ছড়িয়ে দিয়ে সাইফুল আরো বলে, 'কেন ক্যাম্পাসের মানুষ আজ খণ্ড খণ্ড তর্কযুদ্ধে লিপ্ত? কেন মিষ্টি প্রেমিকাটি তাহার বশংবদ প্রেমিকটাকে হেবি চটকাচ্ছে, 'কী বীভৎস, কী অন্যায় আর নির্মম বইল্যা? কেনই বা পথ চলতি বুড়িমা এক নিরীহ রিকশাওয়ালা মামাকে লিয়ে আহাজারিতে লিপ্ত হইয়াছে অযথা? '
' ধীরে...বৎস্য ধীরে..তার আগে গাঞ্জার পুটকিতে একটা গভীর চুমুক দিয়্যা ন্যাও..।' বলে মারুফ জাজ্বল্যমান স্টিক এগিয়ে দেয় আরো নাটকীয় ভঙ্গিতে। তারপর বলে,'তুমি কি সত্যিই কিছু জানো না?'
'না' সাইফুল তার দীর্ঘ চুমুকে ব্যাঘাত ঘটিয়ে খকখক করে কাঁশে।
কাঁশি উপশমে সাইফুলের মাথায় খানদুয়েক চাটি মারে মারুফ আর বলে 'তুমি কি জানো না যে ঝন্টু নামক এক বাজে মায়ের ছেলে এক নিরীহ রিকশাওয়ালা মামাকে কলম দিয়ে কুপিয়েছে?'
'কালামুন দিয়ে কুপিয়েছে?' সাইফুলের লাল চোখ বেয়ে জল পড়ে, তারপরও নাক দিয়ে ফসফস করে ধোঁয়া ছাড়ে আর ঠাশঠাশ করে হেসে উঠে।
ভালো লাগে না মারুফের, বিশেষ করে ঠাশঠাশ হাসি,' হাসছো কেন বন্ধু? কলম দিয়্যা সে শুধু রিকশাওয়ালা মামাকে কুপিয়েই ছাড়েনি, মেরেও ফেলেছে।'
'মেরেও ফেলেছে!' চোখ বড় বড় করে দম বন্ধ করার ভান করে সাইফুল। 'মাইরাও ফালাইছে।' বলে বাপ্পী মারুফকে সমর্থন যোগায়।
একজনকে অবিশ্বাস চলে, কিন্তু দু'জনকে চলে না, অবশ্যই বিশ্বাস করতে ইচ্ছা জাগে। আর যেখানে পথ চলতি বুড়ি এবং মিষ্টি প্রেমিকা সাইফুলকে ধন্দে ফেলেছে আগেই, তাই আর অবিশ্বাসী হতে পারে না সাইফুল,'কিন্তু ঝন্টু নামক বাজে মায়ের শয়তানটা কে?'
'আবার জিঙ্গায়। এনথ্রোপলাজিতে পড়ে ক্ষণিকের পুলায়। থাকে ছালাম বরকত হলে।' বাপ্পী সিগারেটের শুকা ঝাড়া শেষ করে মেঝেতে কফ ফেলে।
'নারে চিনতাছি না। আর কোনও পরিচয় নাই শোরে বাচ্চার?' সাইফুল চেনার চেষ্টা ছাড়ে না।
আতিপাতি করে খুঁজে বাপ্পী বলে 'দাঁড়া...দাঁড়া....আইচ্ছা তুই মুমুরে চিনস না?'
'কোন মুমু? ড্রামাট্রিকসের?' সাইফুল মারুফের বাড়িয়ে ধরা স্টিকে বাড়ি দিতে দিতে বলে।
'হ.. মামা..ওই মুমুর কতাই কইতাছি। যাহাকে তুমি ফোকটে খাহাইতে চাইছিলা।' হিছহিছ করে হাসতে থাকে বাপ্পী, মারুফও হুসহুস করে তাল মিলায়।
'যাহ্ শালা ফণিমনসার ছেলে..কী সব বাজে বকছিস? বাজে কথা রেখে আসল কথায় আয়। তা ওই মুমুর সঙ্গে ওই ণিকের ছেলে ঝন্টুর কী সম্পর্ক?' কথার মোড় ঘুরিয়ে দেয় সাইফুল।
' ওইখানেই তো কবি নীরব... মন্টির ছেলে যাদু ভাই। তুমি কি জান না সকল রসুনের গুহ্যদ্বার একসনে বাঁধা?' বাপ্পী নতুন স্টিকে আগুন লাগায়।
অনেকটা দয়াপরবশ হয়ে বাপ্পী সাইফুলকে বলে..'নে..গাঞ্জায় আরো একটা গভীর টান দে...মাথার মেঘ কেটে পরিষ্কার হয়ে যাবে। রোদ্র ঝিক দিয়ে উঠবে। আর তখনই দেখতে পাবি মুমুর বান্ধবী সুমু কুস্তিগীর,... টপি না পপিরে মারুফ?'
'পপি... পপি' বলে শুদ্ধ করে দেয় মারুফ।
'হ্যা হ্যা...পপি ..পপিই।' আবার শুরু করে বাপ্পী 'ওর কপি ক্ষেতে অন্তত দশটা শিয়াল বাসা বেঁধেছে একসাথে। বাঁধা কপি আর ফুল কপির সঙ্গে ছাইতান মাছের রসা খেতে। এতদিন অবশ্য ওটা ঝন্টুই কষাতো।'
'কষাতো মানে? এখন কষায় না?' বলে সাইফুল কপি ক্ষেতের গভীরে ঢুকতে চায়।
এইবার মারুফ নিজেকে এগিয়ে নিয়ে আসে 'আহা... ওখানেই তো রিকশায়ালা মামার নিহত হওয়ার মূল সুর নিহীত।'
' যা শালা...আবার হেঁয়ালি পেঁচাচ্ছিস? ঘন করে বল, ভালো করে বুঝি।' সাইফুল অসহায়ত্ত্ব প্রকাশ করে।
'আহা.. কেন বুঝছ না বাছা? দুয়ে দুয়ে দশ মিলিয়ে নাও' বলে বাপ্পী কষে একটা টানও দেয় স্টিকে।
' এ কম্ম আমার নয়। তোদের মতো ডোনাডুনি, মনামনি থাকতে, আমি কোন আলেকসান্দর গ্রাহাম বেল ?' সাইফুল সোজা হয়।
....'খুব সত্যি কথা। কিন্তু নমশূদ্রর ছেলে বোগেনভিলিয়া? কেন বুঝতে পারছিস না এই সহজ কেসটা?..প্রথম কথা হচ্ছে...'বলে মারুফ কফ ফেলে মেঝেতে। না..কোনও রক্ত বের হয়নি। তবে বের হবে, আরও কিছুদিন পর। তারপর বলে ...'ওই সুমোটাকেই ভালোবাসতো ঝন্টু। উথালি পাথালি সে ভালবাসা। ওদেরকে ক্যাম্পাসে যত্রতত্রই দেখা যেত, কখনো আধনেংটো, কখনো ফুল নেংটো, আবার কখনো ভয়াবহ কেরিক্যাচারে লিপ্তাবস্থায়। তুই কি জানিস ঝন্টুর মামদোটা আবার কবিতাও লেখে, যা আসলে হয় না। আর তুই যাকে খেতে চেয়েছিলি সেই মুমুটাকে নিয়ে ও যখন ডেইরি ফার্মের কোনও হোটেলে ঢোকে, নিদেন পক্ষে ছয় প্লেট ভাত না মেরে উঠে না। আর তরকারির বিষয়টা তুইই হিসাব কর। কোনও কোনও আইটেম ডাবল থেকে ট্রিপল বারও পাতে তোলে। তা অমন মুশকো সুমোটার নাগর কি-না পুচকে ঝন্টু!... বছরখানেক ঝন্টুকে অবশ্য দিয়ে থুয়েই খেয়েছে। কিন্তু এখন আর ওটা খাওয়াতে রাজি নয় সুমু।... হতে পারে কপি ক্ষেতে নতুন কোনও ধেঁড়ে শিয়ালের আবির্ভাব ঘটেছে। সে যাই হোক, কথা সেখানে নয়। খাওয়ার জিনিস দু'জনেই খেয়েছে। ব্যাস ফুরিয়ে গেছে। কিন্তু জিভে যদি কারও স্বাদ লেগে থাকে সে দায়িত্ব কার? আমার প্রশ্ন এখানেই।'
'উহু কোনও প্রশ্ন শুনতে চাচ্ছি না।' বিছানায় প্রকাণ্ড থাপ্পড় মেরে প্রতিবাদ করে উঠে সাইফুল।
'ওক্কে ডিয়ার' বলে মারুফ তার নেশাটাকে ঘষা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করে। 'যাই হোক..সব ছেড়ে দিলাম। কিন্তু তুই তো জানিস সাইফুল..শরীর বলে বাংলায় একটা কথা আছে, যত গুড় তত মিঠা। তো, তুইই বল, সুমোর অমন মুশকো চমচম শরীর আলগানো কি শুটকো ঝন্টুর পক্ষে সম্ভব? নাকি কেউ তা পারে? তাও তো বছরখানেক দিয়ে থুয়েই খেয়েছে। এখন সুমুটা যদি বলে..,বাছা তুমি সঠিকভাবে পারছ না। আমাকে অন্য কোথাও সম্মান নিয়ে চলে যেতে দাও। অন্যকোথাও সঠিকভাবে মারাই। তাহলে তুমি কি সুমুটার দোষ ধরতে পারবে?'
এবার সাইফুল প্রশ্নটা গিলে ফেলে 'না ,আমি তা পারি না।'
মারুফ সাদা চোখে তাকায়, 'তুমি হয়তো পার না। কিন্তু এতদিন ধরে চমচমের রস খাওয়া ঝন্টুটা তা পারবে কেন? তাই ও বেশ জোর জবরদস্তি করেছিল। কিন্তু কোনওভাবেই ওকে আর ভালবাসা খাওয়াতে রাজি নয় সুমু। ফলস্বরূপ প্রেমবঞ্চিত ঝন্টুটা দু'দিনেই কেমন যেন উসকোখুসকো আর পাগলধরনের হয়ে গেল। আর তাতেই দু'নম্বর সুমুটার গরম জল, তিন নম্বর ঝন্টু খলটা গড়িয়ে দিল পাঁচ নম্বরী ফুটবল মামাটার ওপর। দেখেছিস তো 2 আর 2-এ কেমন দশ মিলিয়ে দিলাম!'
এবার মারুফ দু'হাত ওপরে তুলে স্টিকটাকে কলকি হিসাবে চালিয়ে কপালে ছুঁইয়ে বলে চলে, 'জয় বাবা ভোলানাথ..মা কালী জিন্দাবাদ..দুনিয়ার মজদুর এক হও লড়াই করো...জিন্দা রাহো চিরকাল ভিজিয়ে খেয়ো ভেড়ার বাল....সুমুটাকে আরও ভেড়া দাও, ঝন্টুটাকে আরও ভেড়া বানাও..রিকশায়ালাকে আরও বড় ফুটবল।'
হাহ্ হা হাহ্ হা হেসে ওঠে সাইফুল। পাশের সিটের অভদ্রলোক, ময়লা পোশাকের কমজোরিতে, অবাক হয়।... পাগল নিহি হালায়। গাড়িতে উঠার পর থিক্যাই একটার পর একটা সিকারেট খাইতাছে, কোনও কতা নাই, বার্তা নাই, হঠাশ্ ফ্যাক ফ্যাক কইরা য়াসায়াসি তো ভালো মাইনষের নক্ষণ না। সাবদান অওয়া ভালো মনে কইরা বেশ চাইপ্যাচুইপ্যা বহে।
গাড়ি ঘোড়ার মতোই দ্রুত দৌড়ায় আশুলিয়া রোডে। জলের কাছ থেকে একঝাক শীতল মনোরম বাতাস আছড়ে পড়ে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল যাওয়ার শেষ বাসটার শরীরে। অনেকেই জানালা খুলে বাতাস খায়, তাকিবুকি করে, জ্যোৎস্না আর জলের শোভা দেখে। সাইফুল নির্বিকার। নিজের গভীরে ডুব দিয়ে পাতাল পুরীতে ঢোকে। টলোমলো পায়ে এগিয়ে যায় 301 নম্বর রুমে।
মাথায় গাঞ্জার সুবাসিত ধোঁয়া। মশারি না টাঙিয়ে, একবছর না ধোয়া চাদরের বিছানায় গড়িয়ে পড়ে। ধাপ্পুশ। হাঁটতে থাকে রোববারের নন্দন পুর বাজারের মাঝখান দিয়ে। শ'শ' অচেনা মুখ, শ'শ' অচেনা মানুষ। ইঁন্দুরের যোম.....ইঁন্দুরের যোম.....দুই ট্যাকায় পাঁচ প্যাকেট....ইঁন্দুরের বংশ শেষ...জুলমত হান্দার মানুষের পেটের ভিতর দিয়ে হেঁটে নাই হয়ে যায়। হঠাৎ ঘোড়ায় চড়ে চিনি মিঠা আম গাছ বেয়ে নামে। আলা ক্যারানির বাড়ির ভিতর থেকে সুলতানা চ্যাঁচায় সা....ইফু......ল......খেল.......বী..? চল....বলে ইংলিশ প্যান্ট খুলতে থাকে সাইফুল। কল ঘরে জল পড়ার ছলছল উছল শব্দ। মাথা কামড়ায় শিরশিরে জল পোকা।... এই সাইফুল......এই সাইফুল...।
হু...? ঘুমের ভিতর থেকে তাকায় সাইফুল। অন্জনের ফর্সা মুখ সাইফুলের চোখের কাছে এসে স্পষ্ট হতে থাকে।
' অসময়ে ঘুমিয়েছিস যে? শরীর খারাপ?'
... 'ঊম্না।' সাইফুল চোখ ডলে উঠে বসে। অন্জন সিগারেট ধরায়।... 'খবর শুনেছিস?'
.... 'কী খবর?' ধাতস্থ হওয়ার চেষ্টা করে সাইফুল। রিকশাওয়ালা মামার কেস? হ্যা..য়্য্য্যা হা..হাই হাইকার....'হাই তোলে সাইফুল।
... 'চল্ বেরতে হবে। হাতমুখ ধুয়ে আয়..।' অন্জন তাগাদা দেয়।
... 'কারণ কী ?' সাইফুল ব্যাখ্যা চায়।
... 'চাঁদা তুলতে হবে।' অন্জন ফশফশ ধোঁয়া ছাড়ে।
সাইফুল অন্জনের হাত থেকে সিগারেট ছিনিয়ে জিজ্ঞেস করে...'উপলক্ষ?'
... 'রিকশাওয়ালা মামার চিকিৎসা।' অন্জন বিছানা থেকে উঠে চেয়ারে বসে। খাতা টেনে কলম দিয়ে আঁকিবুকি কাটে। একটা বাঘ আঁকে বিড়ালের মতো যার চেহারা। কেটে একটা গাছ আঁকে। গাছের ওপরে লেখে রিকশাওয়ালা। ....'ও তো মরে গেছে, ঝন্টু শালা ওকে মেরে ফেলেছে।' সাইফুলের আঙ্গুলের চিপায় বন্দি সিগারেটের অতিরিক্ত লম্বা ছাই গড়িয়ে পড়ে বিছানায়। তাও দেখে না সাইফুল। উত্তেজনায় তাকিয়ে দেখে অন্জনের ফর্সা মুখে সুগভীর বেদনা, একটা পেকে যাওয়া ব্রন এবং চোখের কোলে ঘন কালির আস্তর। দীর্ঘরাত না ঘুমানোর চিহ্ন। অন্জন আঁকিবুকি থামায়। কলমটার মাথা লাগিয়ে ছুঁড়ে দেয় টেবিলের কোণে, 'না..মরেনি...। তবে মরে যাওয়ার মতোই। গণস্বাস্থ্যে ভর্তি করা হয়েছে।'
সাইফুলের গলায় আটকে থাকা ধোঁয়া ফুরফুর করে নাক দিয়ে বেরয়,'মরেনি?! তবে যে বাপ্পী আর মারুফ বলল মরে গেছে!'
টেবিলের কোণ থেকে কলমটা কুড়িয়ে আনে অনজন। মাথা খুলে, 'গুজব ছড়িয়েছে।' গাছের মাথায় একটা পাখি আঁকে, নিচ দিয়ে লেখে সাইফুল, 'তবে কানের আঘাত মারাত্মক। কলম দিয়ে ঘা দিয়েছিল।'
অন্জন তাড়া লাগায়, 'যা যা হাতমুখ ধুয়ে আয়...সময় নেই....বারোটার আগেই সবগুলো রুমে পৌঁছতে হবে। নইলে বেশি তোলা যাবে না।'
সিগারেটে লাস্ট বাড়ি দিয়ে তোয়ালে নিয়ে বাথরুমের দিকে এগুতে থাকে সাইফুল। হঠাৎ ঘুরে জিজ্ঞেস করে, 'আর ক্ষণিকের ছেলে ঝন্টুর কী খবর?'
অনজন আঁকা পাখির বড় করে পা আঁকে, 'ওকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। যদিও ওর ডিপার্টমেন্টের লোকজন ইতিমধ্যেই ওকে ছাড়িয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করে দিয়েছে..'
অন্জন গাছের পাশে লেখে পুলিশ ও ঝন্টু। জায়গা না থাকায় গাছের গোঁড়ায় লেখে নৃবিজ্ঞান। ডিপার্টমেন্ট।
গর্জে উঠে সাইফুল, 'কীই? এই তাইলে নৃবিজ্ঞান ডিপার্টমেন্টের প্রগতিশীলতার নমুনা?'
সাইফুলকে ধমকায় অন্জন। 'যা..যা..হাতমুখ ধুয়ে আয়।' কলমের মাথা আটকায়। ছুঁড়ে দেয় টেবিলের কোণে, 'নষ্ট করার মতো সময় নেই। আরও অনেক কথা আছে , পরে বলব।'
সে রাতেই সাইফুলরা চাঁদা তুলেছিল 13শ'69 টাকা। যারা জীবনে কোনওদিন চাঁদা ফাঁদার ধার ধারেনি, বরং রাজনৈতিক, সামাজিক, কালচারাল চাঁদার হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে হলের এ রুম থেকে ও রুমে, সে রুম থেকে ডাইনিঙে, ডাইনিং থেকে টিভি রুমে দৌড়িয়েছে। কিংবা ঘর অন্ধকার করে মশারি টাঙিয়ে মটকা মেরে পড়ে থেকেছে, যতক্ষণ না চাঁদাশিকারীরা রুম থেকে নাখোশ হয়ে বেরিয়ে যায় ততক্ষণ। রক্ত চাই, দরিদ্র মেধাবী ছাত্র পয়সার অভাবে ভাল্ব নষ্ট, টাকা দাও ভাল্ব বাঁচাই, নিজে বাঁচো এবং অন্যকে বাঁচাও... এসব মৌলিক অতি মানবিক ডায়লগ ড্যাম সিজনের মতো ডাল হয়ে গেছে তাদের কাছে, বরাবরই। তাই কিডনি চাই, রক্তের গ্রুপ...নেগেটিভ, নাট্যোৎসব, নাচা গানা হিউজ ফূর্তি, ঢাকা থেকে উড়ে আসছেন সেক্সি রুক্সি কিংবা চুলওয়ালা জেম ভাই নতুবা ন্যাড়াকুলি আইয়ুব চাচ্চু কোনওকিছুতেই তাদের কিছু যায়নি। অথচ নিরীহ রিকশাওয়ালার করুণ পরিণতি তাদের চাঁদানিরোধক হৃদয়েও বাইসনের গুঁতো দিল। ভেঙে চুরমার হয়ে গেল তাদের জীবন যাপনের রূপরেখা। ট্রাঙ্কের চাইনিজ তালা খুলে টেনেটুনে মাস চালানোর সযত্নে সঞ্চিত টাকা থেকে দান করতে বাধ্য হল। হাত কচলে দু না চারের দ্বিধায় পড়ে শেষমেশ চার টাকাই দিয়ে ফেলল।
অনেকেই হতাশ লেকচার ঝাড়লো, অনেকেই বাগে পেলে ঝন্টুর পন্টুন ফাটিয়ে দেবার জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়ে দিল। অনেকেই ছাত্রদের এমন নির্মমতায় সাংঘাতিক লজ্জিত, মর্মাহত এবং ব্যথিত হল। অনেকেই পকেট থেকে দ্রুত দশ টাকার নোট ঝেড়ে এ পাপ থেকে নিজেকে মুক্ত করল।
এর মধ্যেই সাইফুল অন্জনের কাছ থেকে জেনে নিল, সন্ধ্যায় প্রান্তিকে প্রায় দুই আড়াইশ' ছাত্র-ছাত্রী পরিবেষ্টিত ঝন্টু ডাইনোশুয়োরের বাচ্চা রিকশাওয়ালা মামার শরীরের বারকোশ ভাঙার কাজে লিপ্ত হয়েছিল। শরীরের হনলুলু ফাটাতে নানান ধরনের জুজুৎসুর প্রয়োগ ঘটিয়েছিল। সকলেই ভেবেছে এ আর এমন কী। গতানুগতিক ভাড়া বিষয়ক নৈমিত্তিক পিট্টি। তাই আর কেউ ওভাবে গা করেনি। বাঁচাতে আসেনি রিকশাওয়ালাকে মাতাল শুয়োরের কবল থেকে। ভেবেছে এমন দু' চার ঘা প্রয়োজনে সকলেই দিয়ে থাকে। তাই কারোরই অতটা কষ্ট হয়নি চা চপ গিলতে। প্রেমিকার পাদুকায় নিজের পাদুকার চাপ টেবিলের নিচে আর ওপরে চোখ ও হাতের কারসাজিতে রাতের অভিসার নির্ধারিত হচ্ছিল যত্নেই। প্রগতিশীলরাও চা চপে মার্ক্সে এঙ্গেলসে জড়িয়ে মড়িয়ে আন্দোলনের টেম্পু বাড়াতে ছিল একাকার।
তাই কারও কাছে বাধা না পেয়ে ঝন্টুও বিক্রমে পকেটের মসিটাকে অসি বানিয়ে ঘাই মেরে মেরে রিকশাওয়ালা মামার কানের গর্ত মারতে লাগলো। নিয়ম অনুযায়ী কানের গর্ত থেকে বেরিয়ে এল তাজা রক্ত। রক্ত মাটিতে না নামা পর্যন্ত সহকর্মী রিকশাওয়ালারা ভোদাই হয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে সিনেমা দেখতে লাগলো। মেরুদণ্ডে হাড় অপক্ষা রবারের পরিমাণ বেশি থাকায় কেউই এগিয়ে যেতে সাহস করল না। বরং ভয়ে অনেকেরই লিঙ্গ ছোট হয়ে গেল। দু' একজন অবশ্য ক্ষুদ্রাকৃতির লিঙ্গ নিয়েও 'মামা আর মাইরেন না...আর মাইরেন না' বলে ছাড়াতে গিয়েছিল। কিন্তু তারাও ঝন্টুর সর্বগ্রাসী বক্সিঙের হাত থেকে রেহাই পেল না। দু' চার ঘা খেয়ে তারাও ছিটকে পড়ল আশেপাশেই।
দৃশ্যে যখন বেশ কয়েকজন দরদী কৌতূহলী ছাত্রের আবির্ভাব ঘটল এবং ছেদো প্যাদানোর সিনেমা ঘন গোলমালের আশঙ্কা তৈরি করল ঠিক তখনই চা চপে মত্ত প্রগতিশীলরা হুস ফিরে পেল। এগিয়ে এল প্রলেতাড়িয়েৎ রিকশাওয়ালা মামুকে বাঁচাতে। ইতিমধ্যে ঝন্টু কাজের কাজ সেরে ফেলেছে, রিকশাওয়ালা মামার সতেরোটা বাজিয়েছে।
নিয়ম মতো সিনেমার শেষ দৃশ্যে পুলিশ ক্ষণিকের ছেলে এসে ঝন্টু শ্যালকটাকে আটক করে থানার ফাটকে পুরে দিল। বাংলাদেশের উত্তরাধুনিকতার জনক এবং প্রগতিশীলতার মা বাপ বলে আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন নৃবিজ্ঞান ডিপার্টমেন্ট এ হেন আকষ্মিক অভূতপূর্ব ঘটনায় একটুও ঘাবড়ে না গিয়ে ঝাপিয়ে পড়ল দুঁদে নৃবিজ্ঞানীকে রক্ষাকল্পে।
ডিপার্টমেন্ট থেকে ফতোয়া দেওয়া হলো 'ঝন্টু এক নিরীহ জটিল মানসিক রোগী! তাই ওকে দুধ কলা দিয়ে পুষতে হবে ধাঁধাবাজ রিকশাওয়ালাদের গুতানোর তরে।'
ছাত্রদের মুখে মুখেও ভেসে বেড়াতে থাকলো ঝন্টু বিষয়ক নানা রঙচঙে কল্পকাহিনী। 'হ..ঠিকই আছে...খাংকির পুলায় আসলেই পাগল...দেহস না শালার মোছ কত বড়! আইচ্ছা ওর নিচেরডাও কি ওত বড়?' একপশলা খুলখাল হাসি। 'ওর রুমে নাকি সিআইএ'র এজেন্ট হানা দিবো..। এই ডরে চোদনার পুতে হারা রাইত ছাগল কাটার ছুরির ধার পরীক্ষা করে। গভীর রাইতে... ও মাগো ও বাবাগো ও সিআইএ গো ও সুমুগো ও খামুগো বইল্যা চিল্লায়।'
কিন্তু এ ধরনের ধাপ্পাবাজি, কল্পিত কাহিনী ও ঝন্টুর প্রতি সিমপ্যাথি আনয়নের বিভাগীয় মানসিক ক্যাম্পেনে বিশ্বাস রাখলো না নৃবিজ্ঞান ডিপার্টমেন্টেরই গুটিকয়েক অর্ধশিক্ষিত উত্তরাধুনিক ছেলেমেয়ে। যারা আবার অতিসম্প্রতি অতি মানবতাবাদে উদ্বুদ্ধ। ওই দলেরই একজন ছিলেন জনৈকা আন্নাতারা। ' রিকশাওয়ালা বাঁচাও আন্দোলনে' যিনি চাঁন্দা উত্তোলনে বিশেষ পটুত্ব দেখিয়েছিলেন এবং যার চোখের দুষ্ট বিড়াল এ হেন নবকুমারীয় কর্মে নতুন রিক্রুট সাইফুলের নাজুক হৃদয়ে রসালো জিভের মিষ্টি চাট দিতে কসুর করেনি কোনো এক ঝুম্পাক বৃষ্টির দিনে। যেদিন আন্নাতারা সাইফুলকে বসেছিল,' তো ওই কথাই রইলো?'
'কোন কথা? সাইফুল ন্যাকামির সঙ্গে খানিকটা বোকামিও করেছিল। কিন্তু আন্নাতারা তার চোখের দুষ্টু বিড়ালটাকে ঈষৎ লেলিয়ে দিয়ে বলেছিল, 'আসছে পূর্ণিমায় গাঁজা খাওয়াচ্ছেন, হুঁ?
(ক্রমশ)

একটি প্রাকৃতিক সাইজ ফিকশন : শিন্টু ধর্মাবলম্বী রাজা, সবুজ ভদ্রমহিলা এবং একজন অভদ্র সামুকামী

বাবা আমাকে শিখিয়েছিল অর্থাৎ বলেছিল অথবা শেখাতে চেয়েছিল। আমি শিখিনি, বরং ভুলে যাবার চেষ্টা করেছি সত্বর। ' পৃথিবীর কোনো কিছুই ফেলনা নয়...প্রত্যেকটা জিনিসেরই মূল্য আছে, ঈশ্বর সকল কিছুকেই আরো বেশি প্রয়োজনীয় করে তৈরি করেছেন।' ভুল বলেছিল, আমার কাছে মনে হয়-সব কিছুই বাগদত্তা, প্রেমহীন বউয়ের মতোই অপ্রয়োজনীয়।

আকাশ মাথায় নিয়ে শুয়ে আছি, মাটিতে। দীর্ঘকাল পর। দুশ্চিন্তামুক্ত মাথা। কখনো চিৎ হয়ে, কখনো এপাশ-ওপাশ। মাঝে মাঝে কষ্ট পাচ্ছে আমার ডান হাত, মাঝে মাঝে কষ্ট পাচ্ছে বাম হাত। আবার কখনো বা পুরোটা পিঠ। বন্ধুর মতো একটা মেয়ে, বসে আছে পাশে, একটু পেছনে। আরেক পাশে প্রেমিকা মতো একটা মেয়ে, অথচ সে প্রেমিকা নয়। সামনে লাল লাল শাপলাফুলফোটা হ্রদ। জলের রং জলের মতোই আদুরে কালো। সেইবার...এক হলুদ ট্যাক্সিক্যাব ড্রাইভার, চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে তার বন্ধুকে কিংবা প্রেমিকাকে নয়তো বউ নতুবা শ্যালকস্বরূপ কোনো প্রিয় আত্মীয়ের নিকট গল্প মারছিল, তার দূরালাপনীতে যন্ত্রতে .. হ..আমি জাহাঙ্গীরনগরে..হ..সাভারের কাছেই..এইহানে একডা নদী আছে..লাল লাল শাপলাফুল ফুইট্ট্যা আছে...
আমার পাশেই ছিল অনজন। ফাট করে বলে বসলো,' শালারে গ্রীবা ধরে বের করে দেওয়া উচিত।' কেন..কেন.. কেন। কেন তুমি তাকে গ্রীবা ধরে বের করে দিতে চাও? কারণ কি তার অজ্ঞতা? .. একটা মানুষ তো বহু কিছুই না জানতে পারে। তুমিও তো কত কিছু জানো না। তাই বলে আমি তো তোমাকে বের করে দিতে চাইছি না। হলুদ ট্যাক্সিক্যাবওয়ালা হয়তো একটু বেশিই নাদান। সে হয়তো জানে না নদীতে শাপলা ফুল ফুটতে পারে না জলের ব্যস্ততায়। কিন্তু সে কথা জগতের কটা লোকই বা জানে? অথচ দেখো, কী দারুণ উচ্ছ্বাসভরে সে গল্প মারছিল তার কোনো প্রিয় শ্যালকের নিকট। লাল লাল সব শাপলা ফুলের। এই প্রেম ও আন্তরিকতাকে তুমি অগ্রাহ্য করতে পারো না। আমি পারি না অন্তত। অনজন চুপসে যায় ফশ করে।

আজ সেই লাল লাল শাপলা ফুল ফোটা নদীর পাশেই শুয়ে আছি.. ঘেসো মাটিতে। পাশেই বসে আছে বন্ধুর মতো একটা মেয়ে অথবা সে বন্ধু নয়। নাওতো হতে পারে। যেমন আমার পাশেই বসে আছে প্রেমিকার মতো একটা মেয়ে, অথচ সে প্রেমিকা নয়। আমি তাকে বলি, 'আচ্ছা বড় হলে কী হবে তুমি?' সে ভীষণ করে হাসে। বড় হলে কী হবো মানে? আমরা তো বড়ই! আমি বলি..হ্যা.. ধরো চাই.সে তো ঠিকই..কিন্তু অনজনের পুরনো রুমমেট তাকে জিজ্ঞেস করেছিল..বড় হলে কী হবে সে? অনজন আঁকাবাঁকা হেসেছিল এবং বলেছিল..একটা শান্তশিষ্ট গরু। সে হাসে ..প্রেমিকার মতো মেয়েটা হাসে। আমি তাকে বলি..হেসো না..হেসো না মেয়ে..হেসো না কালো মেঘ... তোমার পেটের ভেতর যে ভুল অথবা ফুলের জন্ম হচ্ছে ..তাকে রুখবে কে?..একটা লাল কৃষ্ণচূঁড়া বৃক্ষ হত্যার দায়ে তুমিও অভিযুক্ত হতে পারো..। মানে? বলে চোখ সরু করে প্রেমিকার মতো মেয়ে। শোনো.. বলে আমি তাকে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বোঝাই..আসলে বড় হলে মানুষ দুটো জিনিসই হতে পারে..হয় গরু...শান্তশিষ্ট অথবা অশান্ত। আর নয়তো ছাগল। ম্যা..ম্যা..করতে করতে আমি তার চোখের কালো অংশের গভীরতা মাপি। সেখানে ইট্টুখানি ভালবাসা পাওয়া যায় কি-না দেখি। কিন্তু সেখানেই স্পষ্টই লেখা আছে..দ..য়া, ক..রু..ণা। আমি আরো আদুরে বাদুরে হয়ে, প্রবল উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে দ- কে ভ, য়-কে া, ক- কে ল আর একখানা ছোট্ট কুঁড়েঘর দেখবার প্রত্যাশায় মাতি। কিন্তু প্রেমিকার মতোই অথচ যে প্রেমিকা নয়, খেক শিয়ালের মতোই খ্যাঁক খ্যাঁক করে বলে, হ্যা..আপনারে কইছে?..ধপ করে নিবে যাওয়ার মতোই প্রতিটা শব্দ। কিন্তু তার মুখের গর্ত থেকে..'কইছের পেছন পেছন লাফিয়ে বেরয় একটা মায়াবী বাতাস। আর তাতেই বর্তে যাওয়া বর্তুলাকার আমি আবারও টানটান ভঙ্গিতে শুরু করি, প্রবল আশা নিয়ে। চোখের কালোতে আলো করা এক ভাঙাচোরা কুঁড়ে ঘর দেখবার প্রগাঢ় বাসনায়।.. কিন্তু ধরো চাই ..আমার মাঝে মাঝে মানুষ হতে খুব ইচ্ছা করে। কিন্তু মানুষ হওয়াতো খুব শক্ত কাজ! যেমন একটা পাকা বালকে টেনে সোজা করার মতোই অসম্ভব ব্যাপার। পেটের ভেতর গুঁড়ি মেরে শব্দগুলো লুকিয়ে থাকে। বেরিয়ে আসে আদর করে কুত্তার লেজ সোজা করার মতোই অবাস্তব।

প্রেমিকার মতো মেয়েটা হাসে। চোখের কালো চিকমিক করে উঠে। একটা দুটো খড়কুটো দেখতে পাই। আনন্দে বুকের ভেতর খরগোশের বাচ্চা নেচে নেচে ঘাস খায়। পেছন থেকে বন্ধুর মতো মেয়েটা উঠে যায়। উঠে গিয়ে দূরে বসে। হয়তো আরো গভীর মনোযোগে লাল লাল শাপলাফুল দেখে। এই ফাঁকে আমি আমার বুকের ভেতর নেচে নেচে খাসখাউয়ারত আনন্দিত খরগোশগুলোকে গ্রীবা ধরে খোয়াড়ে ঢোকাই, আনন্দের চাপড় মেরে। তারপর আরো বেশি মুখের কাছে মুখ, চোখের কাছে চোখ নিয়ে প্রেমিকার মতো মেয়েটাকে বলি.. তোমার বুঝি মানুষ হতে ইচ্ছা করে না? মেঘ জমে মুখে। নিষ্পৃহ কণ্ঠে বলে..আমি তো মানুষই। ..হ্যা ..হ্যা..সে তো ঠিকই..সে তো ঠিকই। কিন্তু এরম প্রাণীর মতো মানুষ নয়।..ঐ যে তখন বললাম..মানুষ হওয়াতো বাঁকা বাল সোজা করার মতোই সাংঘাতিক কঠিন। লুকিয়ে থাকা শয়তান শব্দগুলো গুহ্যদ্বার দিয়ে বেরলো না মুখগহ্বর দিয়ে বেরলো..ঠিক ঠাহর করতে পারলাম না। কিন্তু নিজের কানেই যখন শুনলাম, তখন মনে হলো রাস্তার কোনো বাজে পথিক হাওয়ায় শব্দগুলো উড়িয়ে দিয়ে গেছে। ইচ্ছা করলো বাজে পথিকের গলা চেপে ধরি, দ্রুত শয়তান শব্দ থামাই। কিন্তু ডান হাত সে ইচ্ছায় সাড়া দেয় না। ঝিঁঝি ধরা ডান হাত। বাম হাত আগেই ঝিঁঝি ধরে পড়ে আছে মরে। শরীরে ঘুম পাখির মতোই বাসা বুনে যায়। ডানচোখ আপনা আপনিই বন্ধ হয়ে যায়, অবলীলায় খুলে রাখি বাম চোখ। চোখভর্তি লাল লাল শাপলাফুল। চুউউং করে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। মুখোমুখি হয় এক হলুদ ট্যাক্সিক্যাব ড্রাইভার। শাপলাফুল তার আদরের বাড়িঘর। লাল পাপড়িতে বসে জল খলবল করে পা নাচায়। পা নাচায় জল নাচে। জল নাচে..পা নাচে..।
জন হেনরি... জন হেনরি.. নাম তার ছিল জন হেনরি ছিল যেন জীবন্ত ইঞ্জিন...
খোয়াড়বন্দি মনখারাপ করা খরগোশগুলো একজোটে লাথি দিয়ে ভেঙে ফেলে খোয়াড়ের তালা। মুক্তির আনন্দে লাফায়..নাচে..হাততালি দেয়...আনন্দের আতিশয্যে কেউ কেউ কানধরে উঠবস করে। ..ইস্..আর পারি না..সব ভুলে গেছি। ঝট করে পেছনে তাকাই। ধীরে ধীরে উধাও হয় শাপলাফুল। ফিরে আসে প্রেমিকার মতো মেয়েটার কালোমুখ..না পারার বেদনা চোখেমুখে..বলতে থাকে আনমনে..একা একা ...নিজে নিজে..আমার যে কী হবে? বাবার যদি অনেক টাকা থাকতো? অ..নে..ক টাকা?
চুপচাপ শুনি আর মনে ভেতর গজিয়ে উঠতে থাকে বহুমূল্যবান টাকার গাছ। একটা নয়, দুটো নয়, হাজার হাজার গাছ... হাজার হাজার টঙ্কা বৃ লতায় পাতায় জড়ানো মুড়ানো..জঙ্গল ...মধুপুর..জঙ্গলভর্তি টাকা...টাকার মালিক বাঘ।

না..সত্যি...সে বলতেই থাকে..আমার তো চাকরি হবে না..কে আমাকে চাকরি দেবে?... নিশ্চয়ই হবে না..বেশ থমথমে গলায় বলি। শুষ্ক হাসি হাসে প্রেমিকার মতো মেয়ে..ভয় দেখাচ্ছেন? তাকে স্পষ্ট করি। না..বাস্তবতা বোঝাচ্ছি। আরো স্পষ্ট করার জন্য বলি..তা এই ধরো..একখানা চাকরি পেতে হলে তোমাকে কিনতে হবে নিদেনপক্ষে তিন জোড়া স্যান্ডেল। হেঁটে হেঁটে য় করে তবেই না পেতে পারো টিনের হরিণসম বেসরকারি অনিশ্চয়তাপূর্ণ, বিবিধঝামেলাযুক্ত একখানা সস্তা দামের চাকরি। সোনার হরিণসম সরকারি চাকরির প্রত্যাশা..বামনের চাঁদ ভালবাসার মতোই জটিল প্রক্রিয়া..পর্যন্ত বলে বেশ একটা অসহায় ভঙ্গি আঁকি শরীরে, তাতে জটিল প্রক্রিয়ার জটিলতা আরো বৃদ্ধি পায়।

বেশ ছোটাচ্ছেন, টিভি সিনেমা দেখে দেখে নাহ্? প্রেমিকার মতো মেয়েটা এবার যুৎসই ভ্রুভঙ্গি হানে। তা দেখে মরমে মরে যাই। তারপরও সাহসে বুকে ভর দিয়ে খাঁড়াই। মিছে অবাক হই..ছোটালাম কোথায়! এখনো তো ঘোড়ার লাগাম খোলা বাকি..আসল দৌড় তো শুরুই করিনি.. তাই নাকি? বলে আসল ঘোড়দৌড় দেখার আগ্রহ দেখায় মেয়েটা। আমিও শুরু করি প্রথমে দুলকি চালে..তা ধরো নিত্যি গুঁতোগুতি করে পাবলিক বাসে ওঠা, মশার কামড়ের মতো পুচ্ছে একঝাক রাম কিংবা কাম চিমটির জ্বালা, দাঁড়িয়ে থাকলে। আর নেহায়েৎ বসবার জায়গা পেলে পাশের ভদ্রলোক, অভদ্রলোক, বদলোকেরা নিজের ঊরু ভেবে তোমার ঊরুটি ব্যবহার করতে পারে নিশ্চিন্তে... চাকরির বাজারে অনেকেই হয়তো হেসে হেসে কথা কইবে, কেউ কেউ ফাঁসিয়ে দেওয়ার ধান্দা করবে, অনেকেই বন্ধু সাজবে, সাজতে চাইবে প্রেমিক অথবা পুত্রের জনক। অনেকেই সহগামী, সহযোদ্ধা, সহমর্মী হয়ে হাতে চাররঙা কাষ্ঠ ধরিয়ে দিয়ে বলবে..অফিসে আসবেন..কাজের কথা হবে..কামের কথা..।


এক নাগাড়ে বলতে থাকি। বলতে বলতে আমোদিত হই। ঘোড়া বল্গা হরিণীর মতোই রূপকথার সমস্ত দেশ পেরিয়ে শেষমেশ উড়তে থাকে আকাশের দিকে। মোমের মতো জ্বলতে জ্বলতে গলতে গলতে মেয়েটাও হাসে। হাসতে হাসতে বিষম খায়। চারদিকে ফুটতে থাকে লাল শাপলাফুল। অজস্র..অগুনতি। জল খলবল করে পা নাচায় হলুদ ট্যাক্সি ড্রাইভার। জল নাচে, পা নাচে, পা নাচায় জল নাচে।

' কাপুরুষ সিংহ সে তো মারতেই জানে... আমরা যে মরতেও জানি.. মেয়েদের চোখ আজ চকচকে ধারালো...'

জিপারের নীচে লিঙ্গ ছোট হয়ে আসে ভয়ে। কালো মেয়েটা মুখ আলো করে জিজ্ঞেস করে..বড় হলে আপনি কী হবেন? বিপদে পড়ে যাই আমি, কঠিন। কী হতে পারি আমি? একটা শান্তশিষ্ট গরু অথবা অশান্ত ছাগল, ভীরু ভেড়া থেকে আরম্ভ করে বনের বাঘ হওয়া পর্যন্ত ভেবে ফেলি একটানে; শেষমেশ কোনোকিছু না হতে পেরে মুখ ফসকে বেরিয়ে যায় রা..জা..।

বন্ধুর মতো মেয়েটা উঠে আসে কাছে, বসে পড়ে পাশে, হাতে রাখে হাত, বলে..নে ধর ..উপহার। ইউক্যালিপটাস, আকাশমণি, ঘাস, আর হরেক রকমের পাতা ক্ষীণ তৃণে বেঁধে ভালবাসা দেয়। ভালবাসা নিই। ট্যাক্সি ড্রাইভার জল খলবল ছেড়ে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ায় লাল পাপড়িতে। তারপর হন্তদন্ত হয়ে ছোটে নরোম পাপড়ির মসৃণ ভাজ একের পর এক দ্রুত সরায়ে। ফুলের গোপন ঘর থেকে বের করে আনে তার প্রিয় ট্যাক্সিক্যাব। হর্ন বাজায় প..প..পপ..প..প। হেলেদুলে চলতে থাকে লাল পাপড়ির রাস্তায়... ' শোনো ..তাজেল গো..মন না জেনে প্রেমে মইজো না...

প্রেমের জন্য চাই উড়িয়াবাজ ঘোড়া, জরির জামা, জরির জুতা- ওসব কোনো কিছুই তো নেই আমার। ঠা ঠা করে হাসি। অথচ আরো কাছিয়ে আসে বন্ধুর মতো মেয়ে, হাসে খিল খিলিয়ে। প্রেমিকার মতো মেয়ে, গ্রীবা গুঁজে তখনো বসে থাকে দূরে। আমি তার দৃষ্টি আকর্ষণের নিমিত্তে আমার হাল্কা ঝিঁঝি ধরা হাত দুটোকে উড়িয়াবাজ ঘোড়া বানাই। তারপর হাতদুটোকে বাতাসে খেলাই। উড়িয়ে দেই আকাশে। উড়তে উড়তেই বলতে থাকি...

...এ..ক..দা.. এক... শিন্টু ধর্মাবলম্বী রা..জা..। হঠাৎ তার মনে প্রশ্ন জাগে...আচ্ছা ..গাছের পাতা কেন নড়ে? অবাক হয় রাজা..সত্যিই তো কেন নড়ে গাছের পাতা! তিনি রাজা..অথচ তিনিই জানেন না কেন নড়ে গাছের পাতা? এও কি সম্ভব? খুবই সম্ভব। কারণ শিন্টু ধর্মাবলম্বীদের রাজ্য যে আর দশটা উত্তরাধুনিক রাজ্যের মতোই সাংঘাতিক আজগুবি, গুজগুবি এখানকার সব কান্ডকারখানা। অন্যসব উত্তরাধুনিক রাজ্যে যেমন যান্ত্রিক পদ্ধতিতে কাঁচের বাক্সে বাচ্চা ফোটানো হয়, শিন্টু রাজ্যে ব্যাপারটা ঠিক ও রকম না হলেও মোটামুটি অন্যরকম। শিন্টুরা কাঁচের বাক্সে বাচ্চা না ফুটিয়ে ঊরুঝিলি্ল পর্বতের মাথায়, অত্যন্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং পদ্ধতিতে ৩৩ বছর বয়স্ক পূত পবিত্র মানুষ ফোটায়। সঙ্গতকারণেই শিন্টুদের রাজ্যে কোনো শিশু নেই, নেই কোনো অশীতিপর বুড়োও। শুধু তাই নয়, শিন্টুদের রাজ্যে আলোময় দিন আছে, কিন্তু কেউ কখনো অন্ধকার রাত ভুলে কিংবা স্বপ্নেও দেখেনি। যে কারণে কেউই হিসাব রাখে না সময়ের। সময়ের কোনো মূল্যই নেই কারো কাছে। বরং সময় একটা ফালতু বস্তুর মতোই যত্রতত্র হামাগুঁড়ি দিয়ে পড়ে থাকে। উহা কেউ খায়ও না, রঙিন জামা হিসাবে কারো গায়ে দেয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। শিন্টুরা অবশ্য মান্টুদের মতো সকলেই চিরজীবী, চিরযৌবনপ্রাপ্ত। আর মান্টুরা? ওরা তো পাশের উত্তরাধুনিক রাজ্যেরই বাসিন্দা, মাথায় যন্ত্র ফিট করে এবং মন্ত্র উচ্চারণ না করেই যারা কামকলায় লিপ্ত হতে ভালবাসে। আর উহারাও শিন্টুদের মতোই চিরজীবি, চির যৌবনপ্রাপ্ত। তবে শিন্টুরা চিরজীবী, চিরযৌবনপ্রাপ্ত হলেও আদর্শগতভাবে তারা কিন্তু সকলেই বায়ুকামী। কিন্তু তারা মান্টু, পান্টু কিংবা বান্টুদের মতো যান্ত্রিক বায়ুকামে বিশ্বাস করে না। শিন্টুদের কেউই মাথায় যন্ত্র ফিট করে কাম কলায় লিপ্ত হতে রাজী নয়। কারণ রাজাই ওসব ভালো করে ভালবাসে না। বরং তারা প্রত্যেকেই মাথায় মন্ত্র ফিট করে বাতাসে অঙ্গ দুলিয়ে এবং লিঙ্গ চালিয়ে অত্যন্ত আরাম পায়। কারণ রাজা ওভাবেই বায়ু থেকে নিজের জন্য প্রগাঢ়তম আরাম এবং আনন্দ কাড়েন। যাই হোক, রাজা এবং প্রজাদের সম্মিলিত এ অভিনব মতির কারণে শিন্টু রাজ্যের প্রতিটা গ্রামে গঞ্জে, শহরে নগরে বন্দরে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অসংখ্য বায়ুকামঘর। কামঘরের প্রধান পুরোহিত এবং তার পবিত্র সাঙ্গপাঙ্গরা বায়ুকামীদের মাথায় সুনির্দিষ্ট মন্ত্র ফিট করার মধ্য দিয়ে শুরু করে বায়ুকাম প্রক্রিয়া। অতি ধীরে পোশাক আশাক খুলে বায়ুকামীরা একে অন্যের দশ হাত দূরে দূরে দাঁড়ায়। তারপর শুরু করে প্রধান পুরোহিতের নির্দেশ মতো বায়ুতে অঙ্গ দোলানো এবং লিঙ্গ চালানো। এভাবে দীর্ঘণ বাতাসে অঙ্গ দুলিয়ে এবং লিঙ্গ চালিয়ে বায়ুকামীরা গভীরতর এক মানসিক তৃপ্তিতে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। আর এই তৃপ্তিময় আচ্ছন্নতা বায়ুকামীদের শরীর থেকে এক ধরনের পবিত্র জল নিঃসরণে সহায়তা করে। নিঃসৃত পবিত্র জল জমা হয় পবিত্র পুষ্পভাণ্ডে। এরপর প্রধান পুরোহিত এবং তার পবিত্র সাঙ্গপাঙ্গরা পবিত্র জল জমাকৃত পবিত্র পুষ্পভাণ্ড নিয়ে যায় মহাপবিত্র ঊরুঝিল্লি পর্বতের মাথায়, নীল কুয়াশাঘন মহা মহা পবিত্র মেঘঘরে। এরপর রাজার ইচ্ছানুসারে মেঘ ঘরে ফুলের মতো ফুটতে থাকে একেকজন ৩৩ বছর বয়স্ক শিন্টুধর্মাবলম্বী পূত পবিত্র বায়ুকামী..যারা নেমে আসে মহা পবিত্র ঊরুঝিল্লি পর্বতের পা বেয়ে।

প্রেমিকার মতো মেয়েটা হাসে। হেসে হেসে বলে..বেশ আজগুবি তো। আমি আমার উড়িয়াবাজ ঘোড়ার ডানা দুটোকে আবারো বাতাসে খেলাই এবং পাখি বানিয়ে পাখি উড়াই। তারপর বলি..রসো...আজগুবির কী আর দেখলে..ইহা তো কেবল শুরু। তারপর আবার বলতে থাকি ...যদিও শিন্টু ধর্মাবলম্বীদের রাজ্যের সকলেই আদর্শগতভাবে বায়ুকামী, কিন্তু হলে কী হবে? তাদের অনেকেই যে আবার পায়ুকামে লিপ্ত হতেও ভালবাসে! রাজা আবার এসব জানে না। জানলে কঠিন শাস্তি। কণ্টক লিঙ্গে চড়িয়ে ফাঁসি। অন্যদিকে প্রজারাও জানে না যে রাজাই এ কুকর্মের মূল পাঁজি। এভাবে সকলেই একে অন্যের কুকর্মের কথা না জেনে, একে একে সব শিন্টুই পায়ুকর্মে লিপ্ত হতে ভালবাসে। তবে মজার ব্যাপার হলো, প্রকাশ্যে কেউ কারো কুকর্মের কথা না জানলেও, মনে মনে সকলেই সকলের সকলই জানে। কিন্তু তারা সকলেই যেহেতু আদর্শিকভাবে গাঢ় বায়ুকামী এবং বিশ্বাস করে ঘন সবুজ বিপ্লবে, তাই তাদের প্রত্যেকের হাঁটা চলায় ফুটে উঠে এক অতিপ্রাকৃত গাম্ভীর্য।
প্রেমিকার মতো মেয়েটা কিছু না বলে শুধু ছিঁড়ে যায় তৃণের মাথা। বন্ধুর মতো মেয়েটা ফেটে পড়ে উৎসাহে, তারপর কী হলো ..তারপর কী হলো বলে তাগাদা লাগায়..। আমি তবু চেয়ে থাকি প্রেমিকার মতো মেয়েটার দৃষ্টি আকর্ষণে, নিজেকে বানাই উড়িয়াবাজ ঘোড়ার সাদৃশ্যকরণে। তবুও দৃষ্টিহীনের মতোই সে ছিঁড়ে যায় অসংখ্য তৃণের মাথা। আমি আমার ঘাসখাওয়া নিরানন্দিত খরগোসগুলোকে লাগামহীন ঘোড়ার গ্রীবায় চড়িয়ে ছুটতে থাকি দিগ্বিদিক...তো ওই দেশেই বাস করতো এক ভীষণ বাজে লোক। যে বায়ুকামে বিশ্বাস করতো না। পায়ুকামেও ছিল না তার মতি। এহেন বাজে লোকের ভক্তি ছিল বিজাতীয় সামুকামে। মাথায় যন্ত্র অথবা মন্ত্র ফিট ছাড়াই সে বিপুলভাবে উত্তেজিত থাকতো সম্মুখ কর্মে লিপ্ত হওয়ার প্রগাঢ় ইচ্ছায়। কিন্তু তার সে প্রগাঢ় ইচ্ছা পূরণের কোনো উপায়ই ছিল না শিন্টু ধর্মাবলম্বীদের রাজ্যে। কারণ রাজ্যব্যাপী সকলেই ছিল একেকজন আদর্শ বায়ুকামী। যদিও তারা লুকিয়ে চুরিয়ে পায়ুকর্মের মধু খেত, কিন্তু তাদের কেউই সামুকামের মিঠা সম্পর্কে বিশেষ অবগত ছিল না। ফলে এ হেন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সামুকামী সম্মুখকর্মে লিপ্ত হতে না পেরে যাচ্ছেতাই মনখারাপে আক্রান্ত হলো।

আর এই যাচ্ছেতাই মন খারাপ তাকে এতটাই দুর্বিনীত আর কাণ্ডজ্ঞানহীন করে তুলল যে হঠাৎ সে দশ হাত দূরের বায়ুকামরত এক সবুজ ভদ্রমহিলাকে জাপ্টে ধরে উপর্যুপরি লিঙ্গ চালিয়ে দিল। ঘটনার আকষ্মিকতায় বায়ুকামীরা বাতাসে লিঙ্গ চালানো বাদ দিয়ে থ্ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। অনেকেই সামুকামীর বুরবুকামি দেখে হাসতে হাসতে পাগল হয়ে গেল। কেউ কেউ আবার কড়া হাততালিতে ফেটে পড়ল। কিন্তু কর্তব্য ভুলে গেল না প্রধান পুরোহিত এবং তার পবিত্র সাঙ্গপাঙ্গরা। রা..রা..করে তেড়ে আসলো তারা। ঘুসি দিয়ে সামুকার নাক ফাটালো, হনুতে ট্যাপ ফুলালো, কেটে ফেলল জোড়াভ্রু। থুঁতনি আর চোয়ালেরও কিছু বাকি রাখলো না তারা। কে যেন আবার টন্নশ করে মাথায় হাতুড়ির একখানা বাড়িও বসিয়ে দিল। তারপর পুচ্ছে একগাদা শক্তিশালী লাথি দিয়ে তাকে বিদায় করে দিল রাস্তায়।

রাস্তা থেকে টেনে হিঁচড়ে, মাথা ঘুলিয়ে যাওয়া সামুকা নিজেকে নিয়ে পালালো বনে। বনে গিয়ে ণে ণে মনে পড়ল সবুজ ভদ্রমহিলার কথা। দেখতে থাকলো বিভিন্ন এঙ্গেলে সবুজ ভদ্রমহিলাকে জড়িয়ে ধরার মনোরম দৃশ্যাবলি। মন ভালো হয়ে গেল সামুকামীর। কিন্তু একই সঙ্গে ফিরে এল প্রধান পুরোহিত এবং তার পবিত্র গুণ্ডা কর্তৃক প্যাঁদানোর দৃশ্যাবলিও। হাউ মাউ করে কেঁদে উঠল সামুকামী। কান্না ফুরিয়ে গেলে এবার পড়ল গাঢ় লজ্জার ভেতর। লজ্জা তাড়াতে সামুকা দৌড়াতে লাগলো বনময়। লজ্জা কেটে আবার ফিরে এল সবুজ ভদ্রমহিলা, ফিরে এল বিভিন্ন এঙ্গেলে জড়িয়ে ধরার রঙিন সব ছবি। সামুকামী আনন্দের আতিশয্যে তৎণাৎ হাজির হতে চাইলো সবুজ ভদ্রমহিলার কাছে। কিন্তু পরণেই তার মনে পড়ল প্রধান পুরোহিত এবং তার পবিত্র গুণ্ডা কর্তৃক পিটা খাওয়ার কাহিনী। আবার ফিরে এল গভীর বেদনা।

এভাবে সামুকা ক্ষণে হাসে, ক্ষণে কাঁদে এবং হাঁটতে থাকে বনময়। গাছকে মানুষ ভেবে কথা কয়। ফুলকে নিরানন্দে জড়িয়ে ধরে। কিন্তু কতণ? এসব হাল্কা পাগলামি কী আর ভালো লাগে সামুকামীর? তাই খুব সহসাই বিরক্ত হয়ে দুচ্ছাই বলে হাঁটা ধরে গাঁয়ের পথে। অজানা কারণে হাতে তুলে নিল একগাদা হাস্নুহেনা।

খিলখিল করে হেসে উঠে বন্ধুর মতো মেয়ে অথবা যে বন্ধু নয়। চোখে তার ফুটে ওঠে লাল লাল শাপলাফুলফোটা নদী। চোখের রং জলের মতোই আদুরে কালো। বাড়ি ফিরে যায় হলুদ ট্যাক্সিড্রাইবার...ভাত খেতে। সামনেই বসে থাকে বন্ধুর মতো মেয়ে, ভাত বেড়ে। ছোট ছোট অনেকগুলো কুঁড়েঘর...পাশেই শুয়ে আছে নাতিদীর্ঘ নদী...অদূরে খরগোশদের বন...বয়ে যাচ্ছে সময়...আনন্দময়।

এদিকে, রাজা গাছের পাতা নড়ার রহস্য আবিষ্কারে ব্যাপক ভাবতে লাগলো। ভাবতে ভাবতে ভাবতে ভাবতে রাজা কিছুই ভেবে পেল না। খুঁজে পেল না ভাবনার কোনো কূল কিনারাও। যা পেল তা শুধু জল আর জল। বিভ্রান্তিকর হাবুডুবুতে ওইসব নোংরা জল খেয়ে রাজার ত্রাহি অবস্থা প্রকাশ পেল অচিরেই। রাজা দেখতে পেল এ সম্পর্কে তার সীমাহীন অজ্ঞানতা বিরাজিত। তাই শেষমেশ কুলাতে না পেরে রাজা তার বশংবদ মন্ত্রীকে ডেকে বলল..প্রিয় মন্ত্রী ..দুঃখজনক হলেও সত্যি যে আমি একটা ক্ষুদ্র ভাবনায় মাথা গলিয়ে দিয়েছি। কিন্তু আমার ধারণা..এক্ষেত্রে আমার ভাবনা ঠিক সঠিক পথে পরিচালিত হচ্ছে না।
মন্ত্রী বেশ পাকালোক। ক-তে কলিকাতার রেসের মাঠ বোঝে...টাকার উড়াউড়িও দেখে। ফাট করে বুঝে ফেলল পরিস্থিতি এবং দেরী না করে বলল...হুজুর কিছু মনে করবেন না..ইকটু ঝেড়ে কফ ফেলবেন কি? দেখি..অধম আপনার মহৎ ভাবনায় লিপ্ত হতে পারে কি-না..
রাজা অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে শুরু করে...না..আ..। বিষয়টা বিশেষ মারাত্মক কিছু নয়। তবুও বলছি...আচ্ছা ..তুমি কি বলতে পারো গাছের পাতা কেন নড়ে?

মন্ত্রী রাজাকে না দেখিয়ে মুচকি হেসে...বিষয়টা বেশ ইন্টরেস্টিং হুজুর। বেশ সহজ মনে হয়, আবার কোনো মতেই একে জটিলতামুক্ত বলা যাবে না। আসলে আমাদের বিজ্ঞানীরা এ প্রসঙ্গে কী বলেছে... সেটা জানা দরকার সর্বাগ্রে। তাদের ব্যাখ্যানুযায়ী, যদি আমি ভুল না করি, তবে কেউ যদি ৪৫ ডিগ্রি এঙ্গেলে তাকায় ..তাহলে দেখবে... গাছের পাতা নড়ছে...। আবার কেউ যদি ৯০ ডিগ্রি এঙ্গেলে তাকায়...তাহলে সেও দেখবে গাছের পাতা নড়ছে! সত্যি কথা বলতে কী হুজুর! গাছের পাতা নড়ার বিষয়টা আপেকিতায় মোড়ানো...দৃষ্টিবিভ্রম মাত্র।
ভাবতে ভাবতে এমনিতেই রাজার মাথা ছিল ঘুলানো, তারপর যখন দেখলো মন্ত্রী তাকে সঠিক পথের ঠিকানা না দিয়ে ভুল রাস্তায় ছেড়ে দিচ্ছে অবলীলায়, তখন রাজা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না..চুপরাও হারামজাদা..আমাকে ধুনফুন বোঝানো হচ্ছে? ধুনফুন..অ্যাহ?
মন্ত্রী ধরা খেয়ে মরা লোক সেজে গেল নিমেষেই..গুস্তাকি মাফ করবেন হুজুর! সত্যি কথা বলতে কী... একটু হুসেনখুম খেয়েছিলাম কি-না...তাই মাথাটা একটু বাজে বকাচ্ছে।

সামনে বসা নারীদ্বয়কে বলি ..হুসেনখুম হলো এক জাতীয় নেশাদ্রব্যাদি, যা খেলে মানুষের মাথা বাজে কথা বলে।
রাজা এই কথা শুনে আহা..হাহ হাহ করে উঠল..না জেনে আমি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি? আমি তোমার বায়ু কামঘর ভেঙেছি! অনুতাপে দগ্ধ হয় রাজা। পুড়তে পুড়তে বলে..কী করবো বলো? গাছের পাতা কেন নড়ে ..এটা জানা যে খুব বেশি জরুরি! কারণ এটা অত্যন্ত প্রজাগুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

এইবার মন্ত্রী ঝোপে কোপ মেরে ঝোপের ভেতর শুয়ে থাকা নিরীহ সাপটাকে মেরে ফেলে বলে..হু..জু..র..! তবে কেন শুধু শুধু আমরাই বা বিষয়টি নিয়ে ভাবতে যাবো?

রাজা তো অবাক! তাহলে কে ভাববে?
মন্ত্রী জাল গুটানোর আনন্দে খিচখিচ করে হাসে আর বলে...হুজুর ..বিষয়টা যেহেতু অত্যন্ত প্রজাগুরুত্বপূর্ণ..অতএব প্রজাদেরই ভেবে ঠিক করা উচিত ..আসলে গাছের পাতা কেন নড়ে?

হারানো ধন খুঁজে পাওয়ার আনন্দে রাজা কিছুণ ঘুরে ঘুরে নাচে। তারপর বলে..প্রিয়তম মন্ত্রী! তুমি আমার ডান হাতে একটা বড় করে চুম্বন আঁকো এবং রাজ্যে ঢেড়া পিটিয়ে বলে দাও ...যে এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর ভাবতে পারবে...তাকে দেওয়া হবে অজস্র পুরস্কার। আর যে না পারবে তাকে মৃদু শাস্তিসহযোগে তিরস্কার।
নারীদ্বয় একে অন্যের চোখে চোখ রেখে হেসে উঠলো আরেকবার। আরো জোরে ..আরো জোরে..ট্যাঙ্ িচালায় হলুদ ট্যাক্সিড্রাইভার।

মন্ত্রী আসলের সঙ্গে এবার সুদ যোগ করে...হুজুর! ..আমার লাল ঘোড়ার পা টা একটু মচকে গিয়েছিল কি-না..আর ঢেড়াওয়ালাদেরও নতুন জামাজুতো দরকার ছিল কি-না?

রাজা মন্ত্রীর অভিপ্রায় বুঝে ঝোপ পরিষ্কার করে মরা সাপ তুলে নিয়ে চুমু খেয়ে বলে..কোনো অসুবিধা নাই। আমার আস্তাবলে দু'খানা সতেজ লাল ঘোড়া দণ্ডায়মান। যে কোনো একটা তুমি নিয়ে নাও আর যেখানে খুশি সেখানেই ঘুরে বেড়াও.. আর..আর.. অনেকবেশি হুসেনখুম খাও। আর ঢেড়াপিট্টিওয়ালাদের জন্য রাজকোষ অবারিত করো..হলো তো? এবার...

এইবার মন্ত্রী কোনো কথা না বলে, কোনো দিকে না তাকিয়ে হামলে পড়ে রাজার ডান হাতে এবং বাম পায়ে। হুমহাম শব্দে দীর্ঘ সব চুম্বন কাটতে থাকে পাদুকা যুগলে। রাজা উহু উহু আহা আহাময় শব্দে আনন্দে মরে যাওয়ার ভান করে।

এদিকে, সামুকামী দুরু দুরু মনে গ্রামে ফিরে এল। কী এক অজানা কারণে তার হাতভর্তি হাস্নুহেনা। কিন্তু একী! গ্রামে যে কেউই নেই! সামুকাকে ধরবার, মারবার, হাসবার কিংবা ভালবাসবার তরে। কী ব্যাপার তবে?

সামুকার হাতের হাস্নুহেনা শুকিয়ে যেতে থাকে, সবুজ ভদ্রমহিলাকে দেখতে না পেয়ে। কান বন্ধ হয়ে যায়..বায়ুকামীদের অট্টহাসি শুনতে না পেয়ে। চোখ প্রায় অন্ধ হওয়ার দশা..প্রধান পুরোহিত এবং তার পবিত্র গুণ্ডা কর্তৃক প্রদেয় শক্তিশালী ঘুসি এবং লাথির অনুপস্থিতিতে। এ রকম আদিভৌতিক পরিস্থিতিতে পড়ে সামুকামী কিংকর্তব্যবিমূঢ় হওয়া ছাড়া কোনো গত্যন্তর দেখে না। অবশ্য এ বিমূঢ়তাও অমর হয় না। ফলে সারা গ্রাম ঢুরে কাউকে না পেয়ে গ্রামে উপস্থিত একমাত্র নিরাপত্তারী অর্ধশিতি বাঘটাকেই সামুকামী জিজ্ঞেস করে...সকলে সদলবলে কোথায় গিয়েছে? অর্ধশিতি বাঘ হালুম ভাষায় উত্তর দেয়..সুদূর দক্ষিণে। অর্থাৎ রাজার বাড়ি হতাকা বুণ্ডাকাঠে। আর দেরী না করে সামুকাও পা চালালো সুদূর দেিণই।
এদিকে, রাজা তো মহাসমারোহে রাজদরবার সাজিয়ে বসে আছে। মন্ত্রীরও উৎসাহের একফোটা কমতি নাই। সারা রাজ্যে ঢেড়া পিটিয়েছে রাজকীয় কর্মী দিয়ে, ওই আগের ছেঁড়া ঝুল্লা পুরনো পোশাক পরিয়েই। ফলে দলে দলে বায়ুকামীরা রাজধানী হতাকা বুণ্ডাকাঠের দিকে ছুটে আসছে তুমুল বেগে। শক্ত হাতে ভিড় সামলিয়ে মন্ত্রী একে একে বায়ুকামীদের হাজির করছে রাজার সামনে। রাজাও মহানন্দে একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে চলছে ঘুরে ফিরে..বল..বায়ুকামী হরি খাটকা...কেন নড়ে গাছের পাতা?
হরিখাটকার সহজ, সরল নিরীহ মাথা, সে কীভাবে জানবে..কেন নড়ে গাছের পাতা? তবু বহু কষ্টমষ্ট করে বলে..হু..জু..র..! আমি যখন ঘুমিয়েছিলাম? তখন দেখি গাছের পাতা নড়ছে..নড়ছে তো নড়ছেই, থামাথামি নেই।

রাজা একটু নিমরাজি হওয়ার মতো করে বলে..চেষ্টা অতিশয় দুর্বল এবং তা মিথ্যাকে আশ্রয় করে গড়ে ওঠা। এবং সবচে' মজার ব্যাপার হলো সত্য হতে উহার অবস্থান বহুদূরে। অতএব বায়ুকামী হরিখাটকা..তিরস্কার বিনে অন্য কিছু প্রাপ্য নাই তোমার। আর যা আছে...তা হলো মৃদু দলাই মলাই..এই কে আছিস..একে নিয়ে যা...

এরপর মন্ত্রী ডেকে আনলো বায়ুকামী লিরিবিরি আফান্দিকে। রাজা বায়ুকা আফান্দিকেও জিজ্ঞেস করলো একই কথা। কেন নড়ে গাছের পাতা? বায়ুকা লিরিবিরি আফান্দি আবার নিজ গাঁয়ের জ্ঞানী। তাই অনেক বেশি ভাব এবং তারও বেশি ভঙ্গি নিয়ে শুরু করলো..হুজুর! বহু বহু কাল আগে...যখন পৃথিবীর মানুষ সময়ের হিসাব রাখতো...যখন পৃথিবীতে শুধু আলোময় দিনই ছিল না, দেখা যেত রাত্রির অন্ধকারও...ঠিক সেই সময় ...টগডিল পাহাড়ের গুহায় বাস করতো এক ঘড়ি ব্যাঙ। সেই ঘড়ি ব্যাঙটা যখন টকটক করে ডেকে উঠতো, তখনই গাছের পাতা নড়তো।
রাজা বেশ আগ্রহভরে শুনছিল। আফান্দি থামলে রাজা মুচকি হাসে আর বলে..আদিভৌতিক কল্পনাকে আশ্রয় করে গড়ে ওঠা এ গল্প বেশ আবেদনময়ী...কিন্তু তা মোটেও সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করে না। উপরন্তু তা সত্যকে নিমজ্জিত করেছে আরো ঘনান্ধকারে। অতএব বায়ুকা আফান্দি...তোমার জন্য অপো করছে উপযুক্ত তিরস্কারের ব্যবস্থা। এই কে আছিস...এটাকেও নিয়ে যা..এবং রাজধানী হতাকা বুণ্ডাকাঠের সবচে' উঁচু বৃরে মগডালে সংযত করে বেঁধে রাখ্। যখন ব্যথায় কঁকিয়ে কঁকিয়ে টক টক করে কাঁদবে, তখনই সে দেখতে পাবে কীভাবে নড়ে গাছের পাতা।

আফান্দির শাস্তি নির্ধারণের পর মন্ত্রী অতি উৎসাহে ধরে নিয়ে এল এক হলুদ ভদ্রমহিলাকে। হলুদ ভদ্রমহিলা নাচতে নাচতে রাজার সামনে এল এবং নাচতেই থাকলো। রাজা একটু বিব্রত হওয়ার ভান করে গলাখাঁকারি দিয়ে বলল...ভদ্রমহোদয়া...আপনি কি বলতে পারেন..কেন নড়ে বৃরে পাতা?
হলুদ ভদ্রমহিলা নাচ না থামিয়েই চোখ নড়োবড়ো করে বলল..আমি যখন নাচি..এবং নাচতেই থাকি..তখনই দেখি গাছের পাতা নড়ছে এবং তা নড়তেই থাকে।

রাজা বেশ আমোদিত ভঙ্গিতে বলেন..অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত কথা...সত্যের খুউব কাছাকাছি...এই কে আছিস..ওনাকে আমার খাস কামরায় নিয়ে যা। উনি যখন নাচবেন..আমি তখন বৃক্ষপত্রের নড়াচড়া দেখবোণ। তখন যেন আমাকে বিরক্ত করা না হয়। জিভে আনন্দের রস নিয়ে হুম বলে মন্ত্রীর দিকে তাকায়।

মন্ত্রীও বেশ বিগলিত..জ্বি হুজুর জ্বি হুজুর... খুব সুন্দর হয় তাহলে... খিচখিচ করে হাসে।
এভাবে মন্ত্রী বহু বায়ুকামীকে ডেকে নিয়ে এল। আর রাজাও প্রত্যেকের জন্য উত্তম তিরস্কারের সঙ্গে বিস্তর দলাই মলাইয়ের ব্যবস্থা করে বেশ আনন্দেই কাটাতে লাগলো। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হলো না। কেউই রাজার প্রশ্নের সঠিক ভাবনা ভাবতে পারলো না।

পরিস্থিতি যখন এমন, বায়ুকামীদের সকলের সিরিয়াল প্রায় শেষ, ঠিক তখনই মন্ত্রী রাজার সামনে ধরে নিয়ে গেল কান্ত, তিতি বিরক্ত হতাশ সামুকাকে। যে সামুকা হতাকা বুণ্ডাকাঠে এসেছিল জাপ্টে ধরা সবুজ ভদ্রমহিলাকে খুঁজতে। অথচ সামুকাকে একটু জিরোবার সময় না দিয়েই রাজা জিজ্ঞেস করে বসে...তুই বল কেন নড়ে গাছের পাতা?

'গাছের প্রাণ আছে।' সহজ প্রশ্নের সহজ উত্তর দিয়ে সামুকা জিরোবার ফুরসৎ খোঁজে, কিন্তু রাজার পেছনে প্রধান পুরোহিতকে দণ্ডায়মান দেখে চমকে ওঠে অজানা আশঙ্কায়।

এদিকে রাজাকে বেশ কিছুণ চুপ করে থাকতে দেখে দ্বিধান্বিত মন্ত্রী জিজ্ঞেস করে, হুজুর পুরস্কার নিয়ে আসবো? না..উপযুক্ত ভর্ৎসনার ববোস্থা করব?
রাজা সম্বিত ফিরে পেয়ে চিৎকার করে বলে...এই কে আছিস?...একে হত্যা করা হোক।
আমার অপরাধ? সামুকামী রুখে দাঁড়ায়।
রাজা: বহুবিধ..। জিভে ব্যঙ্গ আর শ্লেষের ধার।
সামুকা: যেমন?
রাজা: (অনিচ্ছাসহকারে)..এই যেমন ধরো ..রাজার আদেশের কারণ জানতে চাওয়া।
সামুকা: তারপর?
রাজা: ভিন্ন মতাদর্শে বিশ্বাস
সামুকা: আর?
রাজা: সবুজ ভদ্রমহিলাকে অপমান
সামুকা: আরো শুনতে চাই আমি..।

ক্ষোভে ফেটে পড়ে সামুকামী। রাজাও হিসহিসিয়ে শোনাতে থাকে..সবচেয়ে বড় অপরাধ..সত্য জানো তুমি। ভয় না পাওয়াটাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়..আরো যদি শুনতে চাও..তবে বলতে পারি.. তোমার জন্যই বসে আছি আমি...বিচার সভা সাজিয়েছি..প্রচুর পয়সা খরচা করে লোক দিয়ে রাজ্যব্যাপী ঢেড়া পিটিয়েছি..মন্ত্রী মশায়কে একখানা লাল ঘোড়া বিনি মাগনা দিয়ে দিয়েছি..সে এখন শুধু হুসেনখুম খাবে..আর পুরো পৃথিবী চড়ে বেড়াবে..আর তোমাদের গাঁয়ের প্রধান পুরোহিত, যে তোমাকে তার পবিত্র গুণ্ডা দিয়ে ইচ্ছেমতো পিটিয়েছে, আর রা করেছে আমার স্বপ্নে গড়া সাধের শিন্টু রাজ্যটিকে। তিনিই হবেন আমার নতুন মুখ্যমন্ত্রী, তার প্রতু্যৎপন্নমতিতার জোরে। আর তুমি যাকে জাপ্টে ধরে এলোপাথারি লিঙ্গ চালিয়েছিলে- সেই সবুজ ভদ্রমহিলাকে আমি আমার নিজের কাছেই রেখে দোবো.. যে কোনো ধরনের অনিষ্ট হওয়ার ভয়ে। হিক হিক করে হাসতে থাকে রাজা আর হাউ মাউ করে কাঁদতে থাকে হুসেনখুম চাটা মন্ত্রী মহোদয়রা, একজন অপার আনন্দে অন্যজন অপার বেদনায়।
সামুকামীর রিক্ত নিঃস্ব ব্যথিত হৃদয় শেষবারের মতো বিদ্রোহ করে। কিন্তু তার আগেই কতিপয় রাজকীয় গুণ্ডা ঝাপিয়ে পড়ে বেঁধে ফেলে সামুকামীকে। পেটাতে পেটাতে নিয়ে চলে হত্যার উদ্দেশ্যে। কিন্তু তার একটু আগেই একদল থুঁথু ঝাঁপিয়ে পড়ে রাজার চোখেমুখে।

বন্ধুর মতো মেয়েটা উঠে চলে গেল দূরে। ঘর বাঁধলো বাচ্চাদের স্কুলে। প্রেমিকার মতো মেয়েটা বসে রইলো চুপচাপ, নিজের মতো করে। হাতে নিহত হয় ঘাসের শরীর, দাঁতে নিহত ঘাসের শরীর। অনজনের আঁকা বাঁকা হাসি আরো বেঁকে গেল। কিন্তু হলুদ ট্যাক্সিড্রাইভার আর কখনই আসলো না। অথচ লাল লাল শাপলাফুল এখনো ফোটে, জাহাঙ্গীর নগরের ছোট্ট ঝিলে। বাবা আমাকে শেখাতে চেয়েছিল বহুকথা। আমি শিখিনি। কারণ বাবা ছিল বড্ড গরিব, তাই বোকা। আর মাত্র একটা কথা। সবুজ ভদ্রমহিলা শেষপর্যন্ত বনে চলে গিয়েছিল, রাজাকে ফাঁকি দিয়ে...কারণ তার পেটের ভেতর ফুল হয়ে ফুটেছিল একগাদা লাল কৃষ্ণচূড়া।

বাঘ মানাগুয়া দৌড়াচ্ছে

বস্তুত ফালতু বকে লাভ নাই।
কারণ ভর্দলোকেরা ফালতু বকা ভালবাসে না।
অথচ কী মুশকিল, ভর্দলোক ছাড়া ফালতু বকে মজাউ নাই খুব এট্টা
এই যখন দশা, তখন নিকারাগুয়া এক পিলে চমকানো
সম্বাদ দিল, উহাদের দেশে নাকি সুন্দরী মেয়েরা
ফালতু খেলতে ভালবাসে। ডাল তরকারি খেয়ে দিনরাত বসে থাকে ফালতু খেলবে বলে।
এই সম্বাদ পেয়ে চলে গেলাম নিকারাগুয়ার ঘন জঙ্গলে।
জঙ্গলে বানরেরা ধরল পরথম। কীরে ফালতু খেলতে এয়েছিস?
বললাম, জ্বি হা। ফালতু খেলতেই এয়েছি। বানরেরা পোদ ফাটিয়ে হাসল, সেই শব্দে বাঘ আসল। এসেই বানরদের উদ্দেশ করে বলল, কীরে মাল পেয়েছিস ফালতু খেলার?
বানরেরা উত্তর করল, জ্বি হা জনাব, মাল পেয়েছি বৈকি। সামনেই দণ্ডায়মান। এরপর কিছু বুঝার আগেই বাঘ অামাকে ডাল তরকারি ছাড়াই ফালতু মেরে দিল। এবং তার পেটের ভিতর ঘুমিয়ে পড়তে পড়তেই টের পেলাম, বাঘ মানাগুয়া দৌড়াচ্ছে ফালতু খেলবে বলে।

২ আগস্ট ২০০৭

মোনালিসা

ময়না নামের যে পাখিটা আমাদের সঙ্গে পিরাইভেট পড়তো
তাকে ভালবাসতাম কি-না জানি না, তবে তার কবুতরের মাংস
খাউয়ার জন্য ভাতখুর বিশ্বাস (ভাস্কর বিশ্বাস, যে অনেক ভাত খাইতো) গামলায় ভাত নিয়া হামলে পড়ল।
আর ছিল শ্যামা, যার পুরুষ্ঠু ঠোঁঠের উপরটা ছিল মৃদু ঘামে ঘামা। কাজি সোহেল শরীফ কিংবা হাজামিন ফজলে রাব্বি মিঠু অথবা কালা পুলক, যার পকেটে প্লাস্টিকের মৎস্যবাটউলা চাকু ছিল সদা প্রস্তুত। আম কাটার তরে। তারা সবাই জমেছিল শ্যামার মুক্তোমার্কা ঘামে।
আমি শালা ফেরেব্বাস আজীবনের পাগলা ঘুড়া
নেচেছিলাম মোনালিসার সইনদর্য্যে-সেই কত্তো ছোটবেলা!
ভাবলেই ভালো লাগে।

২৫মে ২০০৭

চৈনিক মেয়েরা

শুনেছি, চৈনিক মেয়েরা বণিক পুরুষদের শরীর খেতে দেয়
পাটিসাপ্টা পিঠাপুলির মতোন। ঘাপ্টি মেরে বন্ধুদের কাছ থেকে এইসব মজাদার গল্প শুনে দৈনিকি চৈনিক মেয়ের পাটিসাপ্টা পিঠা, রিঠা মতস্য সহযোগে খাই।
স্বাদ কেমুন জানতে চাইলে রিঠা মৎস্যই প্রকৃষ্ট উদাহরণ তাহার। কিন্তু তাহারপরো উচুঁ চুঁচি আর ছোট পুশির গপ্প আজীবনই গপাগপ গিলেছি। পিলেচমকানো ধড়াশ ধড়াশ বুকে প্রচুর কাফাকাফিসহযোগে শুনেছি, শুধু ইংরেজি জানা থাকলেই কেল্লাফতে। অরা মারতে দেয় প্রচুর মার। মারকাটারি করতে দেয় উলুবনজুড়ে ঘুলুঘুলু।
ছোট্ট পায়ে নাথি কষায় নিঙ্গে। ভেঙ্গে ফেলে শইলের সমস্ত আইঢাই। ঘাইঘাই না করে বরং সঙ্গীতের সুমিষ্ট পান করায় ফুং ফাং ফু ফাং কথা কয়ে।

৯মে ২০০৭

ঘাসখাওয়া বিড়াল

সত্যিকারের বাঘ কখনো ঘাস খেতে ভালবাসে না
যদিও পিথিমীর যাবতীয় জাতীয় খাদ্যই এখন ঘাস।
তাই ফালতু নিকারাগুয়া মেরে লাভ নেই।
লাভ নেই ফসিল তুলে ফাজিলদের হাসাহাসির খুরাকি দেয়ায়।
দেয়া নেয়ার সিন মডান অামলেই ফুরিয়ে গেছে
পোস্ট মডান আমল খালি নেয়। মানাগুয়াটাকে ফানা ফানা করে মেরে হলদ্যা রঙের ট্যাক্সিক্যাব দৌড়ায়। ম্যাক্সিপরা মেয়েরা আনন্দদায়কভাবে মোচড় দেয় শইল। তাতে তাদের পক্কু দেখা যাক বা না যাক আমাদের মতো ভুদাই বালকেরা গাড়ির মতোই চোখটাকে উঠিয়ে দেয় ম্যাক্সিপরা মেয়েদের বুক্কের ঢালু রাস্তায়। ডাইনে বাঁয়ে না ঘুরিয়ে।
তাই সত্যিকারের বাঘ বলে কিছুই আর নেই।
যা আছে সবই ঘাসখাওয়া বুকবিড়াল।

৬ মে ২০০৭

একটা বিনম্র কাকাতুয়া

একটা বিনম্র কাকাতুয়ার ফাঁদে পড়ে
নিজেকে হারিয়ে ফেললাম একটা বৃক্ষডালে
কাকাতুয়াটাকে নিকারাগুয়ার মেয়েদের মতো
ভালো দেখাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল উ শালা কুনো পাখি না
শুধুই নিকারাগুয়ার ভালো মেয়ে। যারা যে কাউকেই প্রেম খাউয়াতে দ্বিধা করে না। দ্বিধা করে না বুকের ভিতরের উলুবন দেখাতে। তার সুগন্ধি তাপ পুহাতে। গুহাতে আদর করে চাপড়ো মারে ক্ষণে ক্ষণে । ভাল লাগলে খেতে দেয় তার পান্তোয়া শরীর। চেটেপুটে, ঘেটেঘুটে। ছেনেছুনে।
তাই বৃক্ষ ডালে জমে থাকা বিনম্র কাকাতুয়া
আমাকে আজ বেধেঁ ফেলেছে পথিমদ্ধে।

২৮ এপ্রিল ২০০৭

রাবণের সুমতি

নিকারাগুয়া এবং প্রস্তাবিত ধানক্ষেত একসাথে ছিল না। তাই বন্দিসদের ইবাদদ বন্দেগি জিন্দেগিতে হলো না।
চির বিস্ময়ের ব্যাপার হলো ভালো তরকারি থাকলে ভাত খাওয়াটা বেশি হইয়্যা যায় আর চিকন চাইল দাঁতে বাজে না। যেজন্য মুটা চাইল খাই। গাইল শুনতে কারোরই ভালো নাগে না, বুঝি। কিন্তু না দিতে পাইর্যাও কারো কারো খারাপ লাগে না-এইড্যা অবিশ্বাস্য। এতগুইল্যা সত্যি কতা কওয়ার পরও যদি পহটে মাত্র 30 ট্যাহা থাহে তাইলে তো খারাপ।
খুব খারাপ এই যীবন। যৌবনে ইস্ফূর্তি করার পয়সা জোটে না। ফোটে না ফুলের বনে মোড়ব্বা মার্কা মেয়েদের রসালো মৌবন। ধানক্ষেত পাটক্ষেত মরে যাক প্রেমের আলিঙ্গনে। ক্ষতি কি যদি সুমতি এ জনমে নাও ফিরে?

৩১ মার্চ

দুদনইজম

যখন ক্লান্তি অক্লান্তি খসে পড়ে রোদ্দুরে
বহুদ্দূর হাঁটার পর সুমন চৌধুরী অযথাই হাসে
ফ্যাক ফ্যাক করে হাসে।গাক গাক করে হাসে। হাসে আর ঝালমুড়ি খায়
বাদাম চানাচুর খিলায় বিলায় হেলায় অবহেলায়
বিজ্ঞান কিংবা অপবিত্র ঘুড়া বেনামি পুঞ্জিপাট্টা
সাফসুতরো, বিওভল, হাকান শুকের, খন্দকার ফারুকুজ্জামান, মদ খাওয়া। ডেণ্ডাবর। চিল পাখি, খাকি ক্যাম্বেল আলফাতুন কিং আফলাতুন। চুম্বন রমণ লিঙ্গ বমণ, নটিবাড়ি গমন। ডিম খাওন। ছির্যা হাবড়ি। মাউরি উফজাতি। বুকা চুদা, চালাকচুদা । বিংবল পাথর। টেরাকোটা হবিষ্যি। রাম ঠাপ। রাবণ ঠাপ। হেড়িম্বা। দাবনা। লিবিডব। কাঁফাকাফি।
বিস্কুট। কানে জবা ফুলালা পাগল, ঝালমুড়ি কোড়া কোড়া বাল। ঘিত্তা মদু। ম্যাডামের প্যাটে কোক, গাঞ্জা খাওয়া। পালতুলা ঘুড়া। বিজ্জান কোনো অবিমৃষ্যকারী নয়। নৈঙ্গিক নাজনীতির খপপড়ে পড়ে আমি আমার বাজে কথা হারাচ্ছি। মাড়াচ্ছি সাপের মাথায় পা দিয়ে কী হবে? ভাবনা ভাবনা কেন, বাল ফালিয়ে? কে কবে বড় হয়েছে। আজিম ভাই আজিম বিরাদার। আই হেট অল হাফ মার্কসিস্ট। তুমার তো মিয়া চেহারাই হয় না। এই আর যাবে কুথায়? ঘুষা খাইয়া রামু, স্যার স্যার নীচে নাইম্যা আসেন আমার উফরে হামলা হইছে। আমরা খালি হাসি আর হাসাই। আফনে ভাই কী করেন? আমি? আমি গুয়ামারা দিয়ে খাই। শালায় সিকারেট খায় কেমনে? এত্ত ধুমা!!!!!!!!!!!!!!!!!!!

২৭ মার্চ ২০০৭

ভিজ্যা বিড়্যাল

একটি সত্যিকারের ভিজা বিড়ালের অভিনয় করে যখন ধরা পড়লাম, তখন নিজেকে একটা পান্তোয়া গোত্রের ঘাটের মড়া মনে হলো। যে পেটের পীড়ায় ভুগে কুরে কুরে মরে গেছে, কোনো একদিন ভাত না খাওয়া সকালে।
বউ দৈনিকি রুটি দিত তারে, ভালো কোনো সালুন ছাড়াই , খালি গুড়া আলু ভাজি দিয়্যা।
খাইতে খাইতে এবং না খাইতে চাইতে চাইতে তিতিবিরক্ত হইয়্যা প্যাটের পীড়ায় ভুগা ধরল সে।
তার মনে হইলো, পিথিবী অন্ধকার হইয়্যা যাইতাছে
নইতো সে নিজেই আন্ধা হইয়্যা যাইতাছে।
এই দুইডার কুনোডাই যখন সঠিক বইল্যা মনে হইল না, তখন কী সঠিক হবে সেইড্যাও না ভাইব্যা পাইয়্যা এক দুচ্ছাই গোত্রের হশাতা তাকে বেদম পীড়ন দিল।
যেহেতু ওই এলাকায় কুনো চিনা হেন্দু নাই, তাই কিরন মাসীর কাছে উপোশী হিসাবে গিয়াও কোনো ফয়দা লাভের আয়োজনও ছিল নাই।
তাই কোনো গত্যন্তর না দেখে, নিজেকে ঝামেলা হিসাবে ট্রিট নিয়্যা ঘাটে খাড়ানো ইষৎ তাজা লুকটাই ঘণ্টাখানি পর ঘাটের মড়ায় পরিণত হল। কী এক সর্বনাশা অত্যাচারের ইতিহাস! পাতিহাসও যার জন্য কাঁদে না। রাজহাস কীভাবে? কী কারণেই বা কাঁদবে অনিশ্চিত কুনো ভিজা বিড়ালের দুঃখ অবলম্বনে? তাই নিরেট ভিজা বিড়াল এক ক্যারেট বেদনা নিয়্যা ঘাটের মড়া সাজতে ঘাটে গেল।
কিন্তু ঘাটে এক দঙ্গল আধ নেন্টা মেয়েদের স্থানকৃত্য দেখে ঘাটের মড়া সাজা হলো না তার। আর তখনই সে একটা সত্যিকারের ভিজা বিড়াল হিসাবে ধরা খেল ঘাটের আধ ন্যান্টা মেয়েদের কাছে। উহ কী ভীষণ সব্বোনাশ!

২৬ মার্চ ২০০৭

নিকেলের ঘুড়া

নিকেলের ঘুড়া বিকেল মাড়িয়ে গেল।
সকালের ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার পর কে যেন
হাতে বাজারের ব্যাগ ধরিয়ে দিল,
গুঁজে দিল ট্যাকে কিছু ট্যাকা।
ফালতু লাগলেও ডাল তরকারি গেলার আশায় বাজারে যেতেই হয়, তাই যাই।
নইলে কোন পৌষে বাজার নিজের ঘরে বসিয়ে নিতাম!
চাঁদ তারা আর সূর্যের গলফো ফেদে ভুদাই লোকদিগকে হাসাতাম আর হাসতাম।
হাসাতাম আর হাসতাম, বন্ধু সুমনের মতো টকেটিব লুককে কাছে পেয়ে।
তাই নিকেলের ঘুড়া বিকেল পেরিয়ে গেলে
ট্যাকে কুনো ট্যাকা নাই বলে বাসায় বাজার বসাই না কুনো কালেই।
অথচ রাজা হওয়ার সকল বৈশিষ্ট্যই ছিল আমার আর বন্ধুর সুমনের মাঝে।

২৩ মার্চ ২০০৭

বিল্লাল দারোগা

একটা তৃতীয় মাত্রার মিষ্টি বাঘ এবং একটা প্রচলিতঘুড়ার মধ্যে
বন্ধুতা স্থাপনের সুযোগটা গত মঙ্গলবার মাঠে মারা গেল।
অথচ এ কথা আকছারই শোনা যায়, বিল্লাল দারোগার ভয়ে
বাঘ আর প্রচলিত ঘুড়া একই খালে জল খায়।
ঘাস খায় একই মাঠে।
অথচ বিল্লাল দারোগা বেশিদিন বাঁচলো না
ওরে ঘাটাইল ক্যান্টনমেন্টে হিউজ বানাইছিল আমরিরা।
কারণ বিল্লাল শালায় আমরিরেও ঘাস খাওয়াইবার চাইছিল একই খালে। তাই মঙ্গলবার আসলেই এহন আর কোনো মিষ্টি বাঘ কিংবা প্রচলিত ঘুড়ার মধ্যে বন্ধুতা সম্ভব নয়।
কারণ বিল্লাল দারোগারে হিউজ বানাইছিল আমরিরা,
আইজ থিক্যা প্রায় দেড় দশক আগে।
তারপরই রাগে দুঃখে ক্ষোভে বিল্লাল মারা যায়
বাঘ আর ঘুড়ারে এক খালে জল খাওয়াইতে না পাইর্যা।

২১ মার্চ

আজ আর মনে নেই সেইসব

বিপদগ্রস্ত মনে হচ্ছে নিজেকে। প্রকান্তরে বাঘ কিংবা বানরের প্রেমহীনতাও ছুয়ে যাচ্ছে আজ। নাতিদীর্ঘ নদীকে সমুদ্র মনে করার কোনো কারণ নেই। তারপরও চোখের সামনেই বড় হয়ে যাচ্ছে পাতিকায় বিড়াল। নিরীহ মানসিকতা ক্রমেই উত্তপ্ত হচ্ছে।
ভেঙে ফেলছে ডানপিটে ছেলের ফালতু কোলাহল। হলভর্তি লোকেরা যখন খুবছে তালি ফাটাচ্ছে, তবু বিজ্ঞান কিংবা অপবিত্র ঘোড়ার কাউকেই প্রয়োজন নেই। তেমনিই প্রয়োজনহীন আমি তুমার কাছে। চাও বুঝি আরো প্রেম? নিখাত সলীলে ভেজা। গভীর আর উচ্চাঙ্গের দ্যোতনা?
ফাতনা ছাড়াই মাছ ধরার বায়না চেপেছে আজ। যদিও মাছেরা বরাবরই মাটি খায়, অথবা খায় না। কে জানে, আমি তো মাছ নই। কোনো কালেই ছিলাম না আপাদমস্তক এক বুনো ঘোড়া, মিষ্টি বাঘ অথবা ডানাবালা সবিতা।
সেই সব পুরনো অভিমান, কপট রাগে ভেঙে ফেলা সম্পর্কের সূতো আজ আর মনে নাই। কে যেন নাচিয়েছিল। ফালতু অভিমানে খুব বেশি কি কষ্ট পেয়েছিলাম। অতি মানব সাজার আকাঙ্ক্ষা তখনো ছিল। আজ আর নাই সেইসব পাগলামা।

১৪ মার্চ ২০০৭

আমার জ্যাফতের মাজেদা কি?

ফালতু ঘুড়ায় চড়ার মুশকিল হলো যে কোনো সময় পড়ে গিয়ে দাঁত ভাঙ্গার সম্ভাবনা। কিন্তু ডাল তরকারি দিয়্যা ভাত খাইয়্যা রাস্তায় সোজা হাইট্যাও যুদি বিপদে পড়ন নাগে, তাইলে সে সিনের দায়িত্ব কার? নিশ্চয়ই রাস্তার। অথবা রাস্তা পয়দাকারকের। কিংবা রাস্তায় আরো যারা চলাফিরা নেয়, তাগো। নয়তো অন্য কুনো অজানা ফ্যাট্টরের। না হইলে সরাসরি আল্লার সিন।
যাই হোক, সেইসব ফালতু কতা কইয়্যা অন্যের পুটকি বিষ করা আমার উদ্দেশ্য না। বিধেয় হইলো চুরে চুরি করছে। গিরস্ত ধরা খাইছে। এতে অন্যায়ডা কুনহানে? চুর অভাবী, গিরস্ত ধনী। চুরের পহটে মাল নাই, গিরস্তর পহট বুঝাই মাল। সঙ্গতকারণেই চুর গিরস্তর পহট ফাক করলে, এত চেচামেচি কীয়ের? আমি বুজি না।
কিন্তু সিন আসলে অন্যখানে। আমি গিরস্তর বন্দু।ন্যাছারালি আমার দায়িত্ব আছে বন্দুর ভোদাই হওয়ার দিনে তারে আরো চাইরড্যা ফালতু কতা কইয়্যা আরো ভোদাই বানান এবং ঠাওরান। এইড্যা করলা না ক্যান, ওইড্যা করল্যা না ক্যান, তুমি এত ভুদাই ক্যা? এই কতা কওয়ার মদ্যে খোব মজা। হেই মজা নিতেই ফজা ভাই সাইজ্যা বন্দু সুমনরে কিছু আজগুবি কতা শুনাইয়্যাই ফালাইছিলাম। মজাও নিছিলাম খোব। কিন্তু সিন যে এমনে কইর্যা বাড়ি খাইবো এইড্যা বুঝি নাই। চুর শ্যালকপুত্র যে ফালতু চুর নয়, একটা তামাশাকারী বেলেহাজ, এইডা তো দাদা আমি জানতুম না। তাই বেবাকে যহন সুয়াবিন ত্যালে আর গফরগাঁওয়ের বাগুনে জ্বইল্যা উঠলো, আমার চলি্লশা কুলহানি নিয়্যা তহন তাগো দুষ ধরি কেমতে?
দুষ ধরবার না পাইর্যা নিজের মুনেই রিয়ানাইজেশম আইলো, হেইত এইন্না কী করলাম আমি! কাকে থুয়ে কাখে লাড়লাম দাদা???
তাই আষ্টাঙ্গে ক্ষেমা চাইয়্যা আরো কয়ডা দিন আমার মিতু্যর তারিখডা পিছিয়্যা দিতে কইত্যাছি, ভর্দ, অভর্দ, ত্যাদড়, জারক, ম্যানা, ত্যানাসহ পিথিমীর সকল জনতার কাছে।
বিনয়ানবত
আনন্দ ধর্মপ্রচারক

১০ মার্চ ২০০৭

ঘাস ফড়িংয়ের ছেলে

হায়, মরা বাঘ
ঘাস ফড়িংয়ের ছেলে,
পিথুহটার্ড রাত্রির কাছে কী চাওয়ার আছে
বেনামি সর্বনাশ আর ঘৃতাহুতি ছাড়া?
তাই সেইসব নিরীহ বাচ্চার দলে
আচ্ছা করে দৌড়ঝাপ সেরে
একা একা ঘরে ফেরার যাতনা
নিয়েই ঘরে ফিরি। বৈচিত্রবিহীন প্রতিদিন।
ডাইনোশুয়োর কিংবা কিংকংয়ের হাতে পাতে ধরে
মূল্যবান যুযুৎসুগুলো শিখে নিলে পরে
তবু ভাস্কো দা গামামার্কা ঘুষি ফাটাতে পারতাম
নোনাধরা দেয়ালে। যেহেতু সেসব শেখা হয়নি
তাই আঙুলের ডগা দিয়ে দেয়াল ঘষাই সার।
হে মরা বাঘ ঘাস ফড়িংয়ের ছেলে,
বলো, পিথুহুটার্ড রাত্রির কাছে কী চাইবার আছে
এছাড়া?

৬ মার্চ ২০০৭

তাহিতি দ্বীপের বাঁহাতি ছোকরা

তাহিতি দ্বীপপুঞ্জে এক বাঁহাতি ছোকরা ঘুরে বেড়াচ্ছিল
অযথা। সারা দিনমান ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল
নারকোল আর কেয়ার বনজুড়ে ছিল স্বাভাবিক নিস্তব্ধতা
সেই সময় এক নিহত ঘোড়া
এসে সামনে দাঁড়ালো। বলল, ট্যাকে কয় ট্যাকা আছে?
বাঁহাতি ছোকরা ডানহাতে প্রাণ নিয়ে রুদ্ধশ্বাস দৌড়ে
ঘোড়া থেকে দূরে যেতে চাইলো। কিন্তু নিহত ঘোড়া বুড়া হলেও চমৎকার গতি হারায়নি এখনো।
ফলাফল: খাড়ার উপর ধরা পড়লো বাঁহাতি ছোকরা।
ট্যাকের ট্যাকাগুলান নিহত ঘুড়া ঘাসের মতোন চিবিয়ে খেল এটফার্স্ট
তারপর জল চাইলো খলের মতো হেসে,
এইবার এট্টুহানি পানি দে ছ্যামড়া,
ডরাইলি ক্যা? এইধরনের আলগা পিরিতি।
বাঁহাতি ছোকরা দু'হাতে চোখ মোছে
আর খুনখুন করে কাঁদে।
তার চোখের জল মাটিতে নামার আগেই
জল হিসাবে উহা গিলে ফেলে ঘুড়া।
কাঁদতে দেয় না ঠিকমতোন।
কেয়া আর নারকোল বনে তখনও স্বাভাবিক নিস্তব্ধতা।

৩ মার্চ ২০০৭

বাঘ

একদিন নিকারাগুয়ার পথে একটা বাঘ দেখেছিলাম
শান্তিপূর্ণ স্বচ্ছল। আমি বাঘের কাছে গিয়ে
বললাম, ভাই বাঘ..নুনুটা দেখাও তো?
তিনি আমাকে নুনুটা দেখাতে পারলেন না।
অতএব মনে রাখবে নুনু ছাড়া কোনো বাঘ হয় না।
যদি ভাঙচুরের রাজত্বে তুমার মতি থাকে
তবে ততি সেজে বসে থাকলে মানুষ তুমার নিকারাগুয়া দূরে থাক, মানাগুয়াও মারবে না।

২০ জানুয়ারী ২০০৭

পাখি

বস্তুত পাখিদের সম্পর্কে কিছুই জানি না
তারা ভাত দিয়ে দুধ কলা খায়
না দুধ দিয়ে ভাত কলা
ফলাহার করে কি-না তাও জানি না।
এই না জানার অসুখ নিয়ে দীর্ঘদিনের এক
বিসুখে পড়েছি...কিসু খেতে ভালো লাগে না
ভালো লাগলেও তাহা খেতে পাই না।
বিশেষ করে নারীদের...বাড়ি বয়ে অপমান
তাই ফালতু বন্ধুদের সঙ্গে
ঘুরতে যাই নদী ধারে
হাওয়া খাই ফুরফুরে
বাটি ফিরি রাত করে
বউ কথা বলে না
কী এক অজানা অভিমানে...
মান ভাঙাতে পারি না
অলস লাগে...।
ফলে ফিরে আসি পাখিতে
কিছুই জানি না বলে
তুমুল কৌতুহলও
আছড়ে পড়ে মাটিতে
তারা ভাত দিয়ে দুধকলা খায়
না দুধ দিয়ে ভাত কলা
ডিম পাড়ে কি পারে না
নিজ বাচ্চা মারে কি মারে না
করাকরি কোথায় করে?
সমুখে না পিছনে?
ফালতু ডাল তরকারি দিয়ে
ভাত খাওয়া অব্দি কেউ কথা বলি না
না বউ না আমি।
সারা ঘরজুড়ে শুধু পাখি আর পাখি

১৮ জানুয়ারী ২০০৭

রঙিন পিস্তল এবং অরুন্ধুতী রাও

হয়তো পিস্তল সেভাবেই চেয়েছিল
উত্তম ঘোড়া আর চকচকে চাবুক
ভাবুক মন তার ভেবে রেখেছিল
সোনালি চিকুরের মেয়ে অব্দি
যিনি অরুন্ধুতী রাও নন
নিছকই স্বর্ণকেশী যুবতী।
পিস্তল তার রঙিন ঘোড়ায় চড়ে
সোনালি যুবতীর দুই হাত
মেদহীন পেটে নিয়ে পিঠে
স্বাস্ত্যবতী স্তনের খোচায়
উড়ে যায় দিগিবদিক।
তিনি অরুন্ধুতী রাও নন
নিছকই সোনালি যুবতী
রঙিন পিস্তল আর তার
তেজী ঘোড়ার পিঠে
ছুটছে দিগিবদিক।

১৭ জানুয়ারী ২০০৬

নিকিতা ভার্নিকা

কে জানে, পিযুশ নন্দীদের আমলেও প্রেম ছিল?
আরো খোলামেলা, জল ঘোলা করে খেতে হতো
ভিতরের নিকিতা ভার্নিকা...
হয়তো হোঁচট খাওয়ার ফলে নায়িকা নায়কের কোলে
হামাগুড়ি খেত, নায়কের হামিতে ডামির শরীরেও যৌবন খেলতো, বেলতো রুটি পরোটার ভেতর ঈষৎ ময়দার গুড়ি,
গুড়গুড়ি টাটিয়ে উঠলে পিযুশ নন্দী
জানালার চোখ দিয়ে শুধু ফন্দি নয় আস্ত ফিকির
নিকিতা ভার্নিকার সবুজ ঘাসের গালিচা
খুঁজতো কি?
বেলচা চালিয়ে আঙ্গুলগুলিকে ইলিবিলি কাটাতে
ছাটাতে চুল ও চিন্তার বলিরেখা জল বসন্তের দাগ
মাখন মেখে ফের প্রেম চলতো রোজ সন্ধ্যায়
যখন লোকে হারিয়ে যায় যে যার মশগুলে
ছেলেরা খেলে, মেয়েরা খেলায়,
বুড়োরা খোলা হাওয়ায় হয়তো বেড়ায়,
নয়তো জীবনকে উপভোগের নিমিত্তে
গলি ঘিপিচতে ঢুকে যায় মধুরসা আহরণে
শিহরণ...শিহরণে মত্ত তখন নিকিতা ভার্নিকা,
পিযুশ নন্দীর যাতাকলে ফাতা ফাতা করে
নিজেকে অযথা...

৯ জানুয়ারী ২০০৭

পাখিদের ডাকনাম

পাখিদের ডাক নাম আছে কিনা জানি না
জানি না সর্বনাশ কাহাকে বলে
তবে জানি বেশবাশ সাফ সুতরো রেখেও
আটকানো যায় না পাপ।
কাপ কাপ চা গিলেও তৃষ্ণা মিটে না হয়তো
কাপকাপ করলেই কি পয়দা হয় সমাধান ?
তাই পাখিদের ডাক নাম আমি জানি না,
মানি না ডাইনোশুয়োর কিংবা বিড়ালের বৃথা ফিশফাশ
সর্বনাশের ফলে বারোটা বাজলে বাজুক তেরোটা
শুধু পরোটাতে ঘি জমলেই হলো....

৫ জানুয়ারী ২০০৭

তাহিতি নদী তীরের কাহিনী

তবু তাহিতি নদীর কাহিনী জানবার
অভিলাষ জমেছিল মধুর মতো আমাদের মনে
বনে বনে যেভাবে ঘুরে বেড়ায় রঙিন হরিণ কিংবা পাখিদের ছেলে, জলের বুকে জমে থাকা লাল শাপলার মতোন মদমত্ত তুমি আমি
নিরলে অবিরল চোখাচোখি, একা কিংবা একাকী জাপ্টে ধরার তুমুল অভ্যাস
জন্মেছিল লাল শাপলার বন আর সবুজ ঘোড়ার মনে
বনে বনে ঘুরে বেড়ানোর ছলে কলে বলে কৌশলে
জড়িয়ে ধরবার সেই মনোরম দৃশ্যাবলি
ঈষৎ বকাঝকার পর ঈষৎ ভালবাসাবাসি
ঘষাঘষি ঠুসাঠুশি ঝাপাঝাপি ধাপাধাপি
ঠাপাঠাপি শেষে ঈষৎ আলসেমি পেয়ে বসলে
তাহিতি নদী তীরের কাহিনী মনে পড়ে ফের
জলভরা নয়নে নাবিক ও বেবুশ্যের শেষ চাওয়াচাওয়ি, খাওয়াখাওয়ি শেষে
আমরা উঠে পড়ি অবশেষে,
জল দিয়ে ধুয়ে নেই সমস্ত দেহ সমস্ত দৈহিক জ্বালা...
ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখি বালিশে লালা

১৪ ডিসেম্বর ২০০৬